মোঘল জমানার আগের সনাতনী উৎসব বন্ধের নির্দেশ বাংলায়

১৫২৬ সালের প্রথম পানিপথের যুদ্ধে বাবরের জয়ের মধ্য দিয়ে ভারতে মোঘল শাসনের সূচনা। অর্থাৎ প্রায় ৫০০ বছর আগে। কিন্তু বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি তারও বহু আগে থেকে…

Malda’s Historic Rath Yatra Stopped Over Alleged Land Mafia Conspiracy

১৫২৬ সালের প্রথম পানিপথের যুদ্ধে বাবরের জয়ের মধ্য দিয়ে ভারতে মোঘল শাসনের সূচনা। অর্থাৎ প্রায় ৫০০ বছর আগে। কিন্তু বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি তারও বহু আগে থেকে বিকশিত। সেই ঐতিহ্যেরই এক জীবন্ত নিদর্শন ছিল মালদার কলিয়াচকের জলালপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত ৬২৯ বছরের পুরোনো রথযাত্রা (Rath Yatra) ও মিলনমেলা।

Advertisements

এই অনুষ্ঠান শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার ছিল না, এটি ছিল বাংলার সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক আত্মপরিচয়ের অন্যতম স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমানে সেই রথযাত্রা প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা ঘিরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক ও ক্ষোভ।

   

Read Hindi: मालदा का 629 साल पुराना रथ मेला बंद, विवाद!

ঐতিহ্য ধ্বংসের অভিযোগে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ

স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ভূমি মাফিয়া, কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং ভাড়াটে দুষ্কৃতীরা মিলে রথ মেলা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

এই উৎসবের জন্য ব্যবহৃত জমিটি বহু শতাব্দী আগে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে নিবন্ধিত ছিল। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের একাংশ প্রশাসনের সহযোগিতায় সেই জমি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছে। স্থানীয় BLRO (Block Land Reform Officer) অফিস থেকেও এই রেকর্ড পরিবর্তনের প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করছেন গ্রামবাসীরা।

“ধর্মীয় জমির উপর হস্তক্ষেপ” — গ্রামবাসীদের আক্রোশ

স্থানীয়দের প্রশ্ন, যদি শতাব্দীপ্রাচীন এক ধর্মীয় জমির মালিকানা রাতারাতি বদলে যায়, তাহলে কি এই রাজ্যে আর কোনও ধর্মীয় স্থান নিরাপদ?
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত ভৌমিক বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকে এই রথ দেখছি। আমার দাদারাও দেখেছেন। এটা আমাদের ইতিহাস, আমাদের ধর্ম। আর সেই উৎসবের উপরেই এখন চেপে বসেছে রাজনৈতিক প্রভাব।”স্থানীয় হিন্দু সমাজের নেতারা সরব হয়েছেন এই ঘটনায়। হিন্দু সংহতি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠন এই ঘটনার প্রতিবাদে সড়কে নেমেছে। তাঁরা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ধর্মের উৎসব-অনুষ্ঠান একের পর এক টার্গেট করা হচ্ছে।

প্রশাসনের ব্যাখ্যা প্রশ্নের মুখে

জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক থাকায় এবং আইনি জটিলতার কারণে এবছরের রথ মেলা স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে প্রশাসনের এই বক্তব্যে খুশি নয় সাধারণ মানুষ। তাঁদের মতে, এটি শুধুমাত্র জমির প্রশ্ন নয়, এটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্যের বিনাশ।