“আমরা দিদির লোক”– হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক অভিযোগ খগেন মুর্মুর

জলপাইগুড়ির বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু (Khagen Murmu) ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর যে হামলা হয়েছে, তা নিয়ে রাজ্য…

জলপাইগুড়ির বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু (Khagen Murmu) ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর যে হামলা হয়েছে, তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল। বিজেপি সাংসদের দাবি, হামলাকারীরা নিজেরাই স্পষ্ট করে বলেছে তারা “দিদির লোক” অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। এই ঘটনার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

Advertisements

ঘটনাটি ঘটে সোমবার নাগরাকাটা এলাকায়। খগেন মুর্মু এবং শঙ্কর ঘোষ বন্যাপীড়িত গ্রামগুলোতে ত্রাণ বিতরণে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছতেই তাঁদের উপর চড়াও হয় একদল দুষ্কৃতী। শুধু তাই নয়, তাঁদের গাড়ির উপর পাথর ছোড়া হয়, সামনের ও পিছনের কাচ ভাঙচুর করা হয় এবং শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়। ঘটনায় গুরুতর জখম হন মুর্মু। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, তাঁর মুখ থেকে রক্ত ঝরছে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের শয্যা থেকে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুর্মু জানান, “তারা আমাদের ঘিরে ধরে বলেছিল, ‘আমরা তৃণমূলের লোক, আমরা দিদির লোক। বিজেপির এখানে আসার কোনও অধিকার নেই।’ এর পরেই তারা আমাদের উপর হামলা চালায়।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের অনেক নেতা নৌকায় পালাতে সক্ষম হন, কিন্তু আমি ও শঙ্কর ঘোষ আটকে পড়ি। এরপরই পাথর ছুড়ে আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।”

হামলায় তাঁর মুখে গুরুতর চোট লাগে। মুর্মুর কথায়, “গাড়ির ভিতরে ছোড়া একটি পাথর আমার গালে আঘাত করে, হাড় ভেঙে যায়। ডাক্তাররা বলছেন, এর ফলে আমার চোখের দৃষ্টিও হারাতে পারি।” চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পুরোপুরি সুস্থ হতে তাঁর আরও দুই মাস সময় লাগবে।

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাটিকে ‘আইনশৃঙ্খলার সমস্যা’ বলে বর্ণনা করে মন্তব্য করেন, “আমি এই ঘটনাকে রাজনৈতিক করতে চাই না। কিন্তু যাঁরা সব হারিয়েছেন, তাঁদের গ্রামে ৩০-৪০টি গাড়ি নিয়ে ঢুকলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ক্ষুব্ধ হবেন।”

এই মন্তব্যে আরও ক্ষুব্ধ হন মুর্মু। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মাত্র চারজন সাংসদ এবং কয়েকজন বিধায়ক নিয়ে কতগুলো গাড়ি হতে পারে? প্রতিটি গাড়িতে একজন সাংসদ বা বিধায়ক ছিলেন। ৪০টি গাড়ির কনভয় নয়, রক্তাক্ত শরীর দেখতে পেল না প্রশাসন।”

এই ঘটনার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত। বিজেপির অভিযোগ, হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং তৃণমূলের আশ্রয়প্রাপ্ত দুষ্কৃতীদের দ্বারা সংঘটিত। তাঁদের দাবি, বাইরে থেকে লোক এনে তাঁদের প্রবেশ আটকানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালানো হয়।

এদিকে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস মুখ্যমন্ত্রীকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা দ্রুত স্বাভাবিক না করলে সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে, কিন্তু বিজেপির দাবি, আসল দোষীরা এখনও ধরা পড়েনি।

ঘটনাটি তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘাতকে আরও উস্কে দিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ থেকেই এই আক্রমণ, কিন্তু বিজেপির বক্তব্য, এটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। জলপাইগুড়ির এই ঘটনায় যে রাজ্য রাজনীতি নতুন করে উত্তাল হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।