তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে আহত একাধিক BLO

অয়ন দে, কোচবিহার: কোচবিহারে ফের রাজনৈতিক (TMC BJP) সংঘর্ষ। সোমবার দুপুরে কোচবিহার ১ ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে বিজেপির বিএলও-২ সদস্যদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে আসা বিজেপির একাধিক বিএলও সদস্যকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সমগ্র এলাকায়।

Advertisements

সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রশাসনের তরফে সেদিন বিজেপির বিএলও-২ সদস্যদের বিডিও অফিসে ডাকা হয়েছিল ভোট সংক্রান্ত নথি ও কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য। সকাল থেকেই বিডিও অফিস চত্বরে বিজেপির কর্মীরা আসতে শুরু করেন। অভিযোগ, সেই সময়েই তৃণমূল কংগ্রেসের একদল কর্মী লাঠি, বাঁশ ও লোহার রড নিয়ে অফিসের বাইরে জড়ো হয়। এরপর বিজেপির সদস্যরা অফিসে ঢোকার আগে তাদের ঘিরে ধরে মারধর করা হয়। হঠাৎই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, বেধে যায় সংঘর্ষ।

   

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে তীব্র ধস্তাধস্তি চলে। ঘটনায় অন্তত পাঁচ থেকে সাতজন বিজেপির বিএলএ সদস্য গুরুতর জখম হন। আহতদের দ্রুত কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে কয়েকজনের মাথায় ও হাতে চোট লেগেছে।

বিজেপির জেলা নেতৃত্ব অভিযোগ করেছেন, “তৃণমূল কংগ্রেস প্রশাসনের সহায়তায় এই হামলা চালিয়েছে। আমাদের কর্মীরা প্রশাসনিক কাজে অফিসে গিয়েছিল, কিন্তু তাদের রাস্তায় আক্রমণ করা হয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে রাজ্যে গণতন্ত্র বলে কিছুই নেই।”

তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। দলের জেলা সভাপতি জানিয়েছেন, “বিজেপি নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা বাধিয়ে এখন দোষ চাপাচ্ছে তৃণমূলের উপর। আমাদের দলের কেউ হামলার সঙ্গে যুক্ত নয়।”

Advertisements

ঘটনার খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে, এবং হামলায় কারা যুক্ত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিডিও অফিসের বাইরে বিজেপি ও তৃণমূলের কর্মীরা প্রায় আধঘণ্টা ধরে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ফলে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, সাধারণ মানুষ আতঙ্কে পড়েন। এলাকার এক চা বিক্রেতা জানান, “হঠাৎই দৌড়োদৌড়ি শুরু হয়ে গেল, কে কাকে মারছে বোঝা যাচ্ছিল না। সবাই দোকান বন্ধ করে পালালাম।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কোচবিহারে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে লোকসভা ভোট—প্রতিটি পর্যায়েই এই জেলায় রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনিক দপ্তরের সামনেই যদি এমন হামলা ঘটে, তাহলে রাজ্যে রাজনৈতিক সহাবস্থানের অবস্থা কতটা নাজুক, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এই ঘটনার পর এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা এখনও অব্যাহত।