নকশালবাড়িতে ব্রাউন সুগারসহ গ্রেপ্তার দার্জিলিংয়ের দুই যুবক

সৌরভ রায়, শিলিগুড়ি (Siliguri): শহর থেকে গ্রাম, পাহাড় থেকে সমতল—মাদকের কালো হাত যেন সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকের কারবার এখন আর কোনো নির্দিষ্ট স্থানের…

Two Youths Arrested with Brown Sugar in Siliguri, Naxalbari Police Bust Drug Trafficking Attempt

সৌরভ রায়, শিলিগুড়ি (Siliguri): শহর থেকে গ্রাম, পাহাড় থেকে সমতল—মাদকের কালো হাত যেন সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকের কারবার এখন আর কোনো নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই মারাত্মক সমস্যা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কমবয়সি তরুণ-তরুণীরা মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে, যা সমাজের জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি থানার পুলিশ মাদক পাচারের একটি ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের নাম শোহন লামজেল এবং জিগমি তামাং। উভয়েই দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

নকশালবাড়ি থানার পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে এই দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে। জানা গেছে, তারা খড়িবাড়ির পানিট্যাঙ্কি এলাকা থেকে মাদক (ব্রাউন সুগার) কিনে পাহাড়ের দিকে পাচার করার পরিকল্পনা করছিল। পুলিশের অভিযানে তাদের কাছ থেকে ২৩ গ্রাম ব্রাউন সুগার উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও, পাচারে ব্যবহৃত একটি মোটরবাইকও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং ধৃতদের বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। পাচারের সঙ্গে আর কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

   

মাদকের এই কারবার শুধু শিলিগুড়ি বা দার্জিলিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় মাদকের বিস্তার দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ব্রাউন সুগার, হেরোইন, গাঁজার মতো মাদকদ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাচারকারীদের কার্যকলাপও বেড়েছে। শিলিগুড়ি, যা উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত, মাদক পাচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সীমান্তবর্তী এলাকার কাছাকাছি হওয়ার কারণে পাচারকারীরা এই রুট ব্যবহার করে মাদক সরবরাহ করছে।

Advertisements

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত শোহন লামজেল এবং জিগমি তামাং দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এখন এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের খোঁজ করছে। নকশালবাড়ি থানার পুলিশের এই সাফল্য এলাকার মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। তবে এটাও সত্য যে, মাদকের এই বিস্তার রোধ করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাদকের কারবারের কারণে এলাকার তরুণ প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে। অনেক কমবয়সি ছেলেমেয়ে নেশার কবলে পড়ে পড়াশোনা, কাজকর্ম ছেড়ে অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে।

মাদকের এই সমস্যা সমাধানে শুধু পুলিশের অভিযানই যথেষ্ট নয়। সমাজের সব স্তরের মানুষের সচেতনতা এবং সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের প্রতি নজর রাখা এবং তাদের মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা। এছাড়াও, স্কুল-কলেজগুলোতে মাদকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন। সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।