বন্য শূকরের আতঙ্ক, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ২

অয়ন দে, কোচবিহার: কোচবিহারের মাথাভাঙা ২ ব্লকের ঘোকসাডাঙা অঞ্চলে বন্য শূকরের (Wild boar) তাণ্ডবে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বন্য প্রাণীর আক্রমণে…

অয়ন দে, কোচবিহার: কোচবিহারের মাথাভাঙা ২ ব্লকের ঘোকসাডাঙা অঞ্চলে বন্য শূকরের (Wild boar) তাণ্ডবে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বন্য প্রাণীর আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে দুই গ্রামবাসীর। ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বনদপ্তরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।

Advertisements

প্রথম ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার সকালে ছাড়ারপার এলাকায়। স্থানীয় কৃষক ধীরেন বর্মন (৫৬) নিজের জমিতে কাজ করার সময় হঠাৎই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা একটি বন্য শূকর তাঁকে আক্রমণ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শূকরটি প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ছিল এবং তাঁকে একাধিকবার আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় ধীরেনবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর বুধবার সকালে আরও এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ভেলাকোপা এলাকায়। পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন বর্মনের বাবা রমেন বর্মন (৬৮) খেত থেকে বাড়ি ফেরার সময় বন্য শূকরের আক্রমণের শিকার হন। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি।

একই এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখন আর সকালে কিংবা সন্ধ্যায় খেত-খামারে কাজ করতে যেতে পারছেন না। “প্রতিদিনই শূকর গ্রামে ঢুকে পড়ছে। কখন আক্রমণ করবে বলা যাচ্ছে না,” বলেন এক বাসিন্দা।

পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন বর্মন বলেন, “আমার নিজের বাবা বন্য শূকরের আক্রমণে মারা গেছেন। এটা কোনও সাধারণ ঘটনা নয়। বনদপ্তর একেবারে উদাসীন। আমরা বারবার অভিযোগ করেও কোনও ফল পাইনি।”

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরেই এলাকায় বন্য শূকরের উপদ্রব বাড়ছে। ফসলের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষ আহত হয়েছেন। কিন্তু বনদপ্তর কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বনদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা এলাকায় বিশেষ দল পাঠাচ্ছি। শূকর ধরার জন্য ফাঁদ পাতা ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”

স্থানীয়দের দাবি অবিলম্বে শূকর ধরার অভিযান শুরু করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গ্রামাঞ্চলে টহলদারি ও নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বর্তমানে গ্রামে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের একা বাইরে না বেরোনোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষিকাজ ও দৈনন্দিন চলাফেরার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এই ঘটনাগুলি ঘোকসাডাঙা অঞ্চলের মানব-প্রাণী সংঘাতের গভীরতাকে আরও একবার সামনে এনে দিয়েছে। স্থানীয়দের একটাই দাবি— “বন্য প্রাণীদের দ্রুত জঙ্গলে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে মানুষের প্রাণ ও সম্পত্তি রক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।”