বাঁশ চুরির অভিযোগে মারধর, ফাঁসিদেওয়ায় মঙ্গল টুডুর মৃত্যুতে ঘিরে উত্তেজনা

সৌরভ রায়, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগর কামারগছ এলাকায় বাঁশ চুরির অভিযোগে মারধরের ঘটনায় এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু (Tribal man beaten to death) হয়েছে। মৃতের…

Bidhannagar murder case

সৌরভ রায়, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগর কামারগছ এলাকায় বাঁশ চুরির অভিযোগে মারধরের ঘটনায় এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু (Tribal man beaten to death) হয়েছে। মৃতের নাম মঙ্গল টুডু, স্থানীয় ভীমবারের বাসিন্দা। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে, এবং পুলিশ ইতিমধ্যে একজন অভিযুক্তকে আটক করেছে। সামান্য বাঁশ চুরির অভিযোগে এমন মর্মান্তিক পরিণতি এলাকাবাসীকে হতবাক করেছে, এবং এই ঘটনা নিয়ে এখন তীব্র ক্ষোভ ও শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে।

ঘটনার বিবরণ
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিধাননগর কামারগছ এলাকায় একটি বাড়ির সামনে প্যান্ডেলের জন্য রাখা বাঁশ নিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত। অভিযোগ, মঙ্গল টুডু ওই বাঁশ বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর স্থানীয় তিনজন ব্যক্তি তাঁকে বেধড়ক মারধর করে বলে দাবি করা হচ্ছে। মারধরের পর অভিযুক্তরা মঙ্গলকে টেনে-হিঁচড়ে তাঁর বাড়িতে ফেলে চলে যায়। খবর পেয়ে পরিবার ও প্রতিবেশীরা তড়িঘড়ি মঙ্গলকে উদ্ধার করে বিধাননগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

   

শুক্রবার মঙ্গলের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফাঁসিদেওয়া থানার বিধাননগর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। এই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে, এবং ফাঁসিদেওয়ার ওসি চিরঞ্জিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, ঘটনার আসল কারণ উদঘাটনের জন্য তদন্ত চলছে। পুলিশ ইতিমধ্যে একজন অভিযুক্তকে আটক করেছে, এবং বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।

এলাকায় ক্ষোভ ও শোক
এই ঘটনা এলাকাবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি করেছে। সামান্য বাঁশ চুরির অভিযোগে এমন নৃশংস মারধর এবং মৃত্যুর ঘটনা স্থানীয়দের কাছে অবিশ্বাস্য। মঙ্গল টুডু একজন আদিবাসী ব্যক্তি ছিলেন, এবং তাঁর পরিবার ও প্রতিবেশীরা এই ঘটনাকে ‘অন্যায়’ এবং ‘অমানবিক’ বলে অভিহিত করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা হারিয়া মুন্ডা বলেন, “সামান্য বাঁশের জন্য কাউকে এভাবে মারা হবে, এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।”

এলাকার অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, মঙ্গল টুডু আদৌ বাঁশ চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা। এই বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে, এই ঘটনা স্থানীয় সমাজে বিচার ব্যবস্থা ও ন্যায়ের প্রতি প্রশ্ন তুলেছে। অনেকে মনে করছেন, সামান্য অভিযোগে নিজের হাতে বিচার করার প্রবণতা এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম দেয়।

Advertisements

অনুরূপ ঘটনার প্রেক্ষাপট
এই ঘটনা বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ব্যাটারি চুরির অভিযোগে মারধরের পর এক রিকশাচালকের মৃত্যুর ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেখানে হাসানুর নামে এক ব্যক্তিকে ব্যাটারি চুরির অভিযোগে মারধর করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, এবং পাঁচ দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায়ও স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেছিলেন। শিলিগুড়ির এই ঘটনাও একই ধরনের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি তুলেছে।

পুলিশের ভূমিকা ও তদন্ত
ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এছাড়া, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে। তবে, এই ঘটনা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উপরও প্রশ্ন তুলেছে।

সামাজিক প্রভাব
শিলিগুড়ির এই ঘটনা কেবল একটি মৃত্যুর ঘটনা নয়, এটি সমাজে বিচার ব্যবস্থা ও সামাজিক ন্যায় নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। সামান্য চুরির অভিযোগে এমন নৃশংস ঘটনা সমাজে অসহিষ্ণুতা এবং নিজের হাতে বিচার করার প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। এলাকাবাসীরা দাবি করছেন, এই ধরনের ঘটনা রোধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা এবং সচেতনতা প্রয়োজন।

মঙ্গল টুডুর মৃত্যু শিলিগুড়ির বিধাননগর কামারগছ এলাকায় একটি শোকের ছায়া ফেলেছে। বাঁশ চুরির অভিযোগে মারধরের এই ঘটনা কেবল একটি পরিবারের ক্ষতি নয়, বরং সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। পুলিশের তদন্তে আসল সত্য উদঘাটনের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সমাজে সহিষ্ণুতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হচ্ছে।