অয়ন দে, কোচবিহার: ফের রাজনৈতিক হিংসা কোচবিহার জেলার দিনহাটা ২ নং ব্লকের বামনহাট এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি (TMC Worker) দীপক কুমার ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুন্না নামের এক যুবককে ধারালো দা দিয়ে কোপায় হরিটপাট এলাকার বাসিন্দা বাপি বর্মন।
ঘটনাটি ঘটেছে রাত প্রায় নয়টা নাগাদ, বামনহাট অফিসপাড়া সংলগ্ন এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুন্না অফিসপাড়া এলাকায় একটি দোকান থেকে কিছু কিনছিলেন, ঠিক সেই সময় অতর্কিতে হাজির হয় অভিযুক্ত বাপি বর্মন। অভিযোগ, হাতে থাকা দা দিয়ে মুন্নার মাথা লক্ষ্য করে হামলা চালায় সে। মুহূর্তের মধ্যে চিৎকারে ছুটে আসে আশেপাশের মানুষজন। মুন্না মাথা সরিয়ে নিলে তার গালে দায়ের কোপ লাগে। মুখে গভীর ক্ষত নিয়ে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে বাপি বর্মনকে আটকে রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু সে প্রচণ্ডভাবে প্রতিরোধ করে বলে জানা যায়। এরপর উত্তেজিত জনতা তাকে ঘিরে ধরে। খবর যায় সাহেবগঞ্জ থানায়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত মুন্না ও অভিযুক্ত বাপি উভয়কেই উদ্ধার করে বামনহাট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর মুন্নার অবস্থা স্থিতিশীল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। অপরদিকে, পুলিশ সেখান থেকেই বাপি বর্মনকে গ্রেফতার করে।
ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয়দের দাবি, বামনহাটে তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে বিগত কয়েক মাস ধরেই অশান্তি চলছে। সম্প্রতি পুজোর সময়ও দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। এবার সেই রাজনৈতিক রেষারেষি মারাত্মক রূপ নিয়েছে বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
দিনহাটা ২ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দীপক কুমার ভট্টাচার্য ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “বাপি বর্মন একজন বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতী। কয়েক দিন আগে থেকেই এলাকায় উসকানি দিচ্ছিল। দুর্গাপূজোর সময় শান্তির জন্য আমরা কিছু বলিনি। কিন্তু এবার এই হামলা একেবারে পরিকল্পিত।”
তিনি আরও বলেন, “বিজেপি যদি ভাবে এইভাবে আমাদের কর্মীদের উপর আক্রমণ চালিয়ে এলাকায় ভয় সৃষ্টি করবে, তাহলে ভুল করছে। পুলিশ যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমরা সংগঠনের তরফে আন্দোলনে নামব।”
অন্যদিকে, স্থানীয় সূত্রে খবর, বাপি বর্মন অতীতে একাধিকবার ছোটখাটো রাজনৈতিক সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গুরুতর হামলার মামলা (IPC 326) রুজু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজেপি জেলা নেতৃত্ব অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই। তারা দাবি করেছে, এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিবাদের ফলাফল। তবে তৃণমূলের দাবি, এটি বিজেপির সংগঠিত রাজনৈতিক সন্ত্রাসেরই অংশ।
বর্তমানে বামনহাটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টহলদারি চলছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপরাধী যে-ই হোক, আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।