নিজস্ব প্রতিবেদন, কোচবিহার: রাজ্য রাজনীতিতে ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে কোচবিহারে। তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী দিনে বিজেপি যেদিন কর্মসূচি নেবে, সেদিনই পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণ করবে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে এই চাঞ্চল্যকর ঘোষণা করেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে সমগ্র রাজ্য জুড়ে কর্মসূচি চলছিল। সেই সময়েই উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতারা ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে থাকে যে, পরিকল্পিত ভাবেই কি সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে?
এই প্রেক্ষিতেই তৃণমূলের তরফে কড়া বার্তা দিলেন অভিজিৎ দে ভৌমিক। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “বিজেপি যেদিন কর্মসূচি ঘোষণা করবে, আমরা সেদিনই পাল্টা কর্মসূচি করব। আমরা মার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু আর পিছিয়ে থাকব না।”
জানা গিয়েছে, আগামী দিনে বিজেপির পক্ষ থেকে কোচবিহারে একটি বড় কর্মসূচি রয়েছে, যেখানে রাজ্যের ৬৫ জন বিজেপি বিধায়ক উপস্থিত থাকবেন। সেই কর্মসূচিকে ঘিরেই জেলার রাজনীতিতে উত্তেজনা তুঙ্গে। তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছে, ঠিক সেই দিনেই তৃণমূলের পক্ষ থেকেও দুটি বড় জনসভার আয়োজন করা হবে। একটি উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র এবং অপরটি মাথাভাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্রে।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, একই দিনে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি থাকলে তা প্রশাসনিকভাবে কতটা সুষ্ঠুভাবে সামাল দেওয়া যাবে? আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে। যদিও এই বিষয়ে অভিজিৎবাবু বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি করব। যদি কেউ বাধা দেয়, আমরা তার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।”
তৃণমূলের এই কৌশলকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘প্রতিরোধ কৌশল’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। তাঁদের মতে, বিজেপির উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক আন্দোলনকে রুখতে মাঠে নেমেছে তৃণমূল। একদিকে যেমন জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো, অন্যদিকে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়াও রয়েছে এই সিদ্ধান্তের পেছনে।
এদিকে বিজেপির পক্ষ থেকেও এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে। দলের এক জেলা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তৃণমূল সন্ত্রাস করে আমাদের ভয় দেখাতে চাইছে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করব, তৃণমূল সংঘর্ষ চাইলে মানুষ তার যোগ্য জবাব দেবে।”
অর্থাৎ, পঞ্চায়েত নির্বাচন, লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কোচবিহারের রাজনীতি। এখন দেখার, একই দিনে দুই দলের এই কর্মসূচিকে প্রশাসন কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, এবং এর প্রভাব রাজ্য রাজনীতিতে কতটা পড়ে।