২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গের সাংগঠনিক ঘাঁটিকে শক্তিশালী করতে তৃণমূল কংগ্রেস বড় পদক্ষেপ নিল। উত্তরবঙ্গের (North Bengal) তিন জেলা আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ির ব্লক স্তরের নেতৃত্বে বড় রদবদল ঘোষণা করল রাজ্যের শাসকদল। নতুন মুখদের দায়িত্ব দিয়ে আগামী নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের শক্ত ঘাঁটিগুলিকে দখল করার লক্ষ্যে তৃণমূল এবার থেকে সংগঠনের ভিত আরও মজবুত করতে উদ্যোগী হয়েছে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন আসনে বিজেপি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছিল। যদিও লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পরিস্থিতি অনেকটাই ঘুরিয়ে দিয়েছে। তাই এবার ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে একেবারে নিচুতলা থেকে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে চাইছে তৃণমূল। আলিপুরদুয়ার জেলায় আটটি সাংগঠনিক ব্লকের মধ্যে পাঁচটিতে সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকে পরিতোষ বর্মনের বদলে সভাপতি হয়েছেন জ্যোতিদাস অধিকারী।
কুমারগ্রামে ধীরেশচন্দ্র রায়ের পরিবর্তে সুদয় নার্জিনারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কালচিনি ব্লকে তরুণ মুখ পেমা লামাকে সভাপতি করা হয়েছে অসীম লামার জায়গায়। মাদারিহাট ব্লকে এতদিন দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন বিধায়ক জয়প্রকাশ টোপ্পো, তাঁর বদলে সভাপতি হয়েছেন বিশাল গুরুং। ফালাকাটা টাউন ব্লকে শুভব্রত দে’র পরিবর্তে নতুন সভাপতি হয়েছেন রাজু মিশ্র। তবে আলিপুরদুয়ার-১, ফালাকাটা গ্রামীণ এবং আলিপুরদুয়ার টাউন ব্লকের সভাপতির পদ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, আলিপুরদুয়ারে জেলা সভাপতি প্রকাশ চিকবড়াইক, চেয়ারম্যান গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা এবং বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালের ঘনিষ্ঠদের গুরুত্ব দিয়ে এই রদবদল হয়েছে। জেলা সভাপতি প্রকাশ চিকবড়াইক বলেন, “বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ভালো ফল করতে চায়। তাই সাহসিকতার সঙ্গে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
কোচবিহার জেলার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাংগঠনিক পরিবর্তন করা হয়েছে। হলদিবাড়ি শহর, মেখলিগঞ্জ শহর ও গ্রামীণ, তুফানগঞ্জ শহর এবং তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের নেতৃত্বে নতুন সভাপতি দায়িত্ব পেয়েছেন। কোচবিহার-২ ব্লকে এখনও নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা হয়নি। রাজনৈতিক সূত্রে খবর, এই ব্লক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দলের অন্দরে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
তুফানগঞ্জ শহরে সভাপতি হয়েছেন গৌতম সরকার। লোকসভা ভোটে তাঁর ওয়ার্ডে তৃণমূল লিডে থাকায় তাঁকে পুরস্কৃত করেছে দল বলে মনে করা হচ্ছে। মহিলা কমিটিতেও সাতটি ব্লকে নতুন সভাপতিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যুব এবং শ্রমিক সংগঠনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোচবিহারের জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন জানান, “প্রত্যেকের কাজের মূল্যায়ন করে মার্কশিট তৈরি করে এই তালিকা করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২৬ সালে প্রতিটি আসনে জয়।”
জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষেত্রেও মালবাজার গ্রামীণ এবং শহর কমিটিতে বড় রদবদল হয়েছে। মালবাজার গ্রামীণ ব্লকে সুশীল কুমার প্রসাদের পরিবর্তে সভাপতি হয়েছেন জিতনি মাহালি। মালবাজার শহরে অমিত দে’র জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন পুলিন গোলদার। জলপাইগুড়ি সদর শহরে দলীয় অভিজ্ঞ নেতা শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে সভাপতি করা হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক বলেন, “যাঁরা নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁরা বহুদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছেন।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপির প্রভাবশালী ঘাঁটি উত্তরবঙ্গেই পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের মূল লড়াই। তাই এবার থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস নিচুতলা থেকে সাংগঠনিক কাঠামো শক্ত করতে চাইছে। দলীয় সূত্রে খবর, আগামিদিনে আরও জেলা ও ব্লক স্তরে সাংগঠনিক পরিবর্তন আসতে পারে।