অয়ন দে, কোচবিহার: বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাকে বারবার বঞ্চিত করার প্রতিবাদে কোচবিহার (Cooch Behar) জেলার দেওয়ানহাট অঞ্চলের ঘেঘিরঘাট বাজারে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। এই মিছিলে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই প্রতিবাদের তীব্রতাকে আরও জোরালো করেছে। এই প্রতিবাদী পদযাত্রা বাংলার গর্ব ও সম্মান রক্ষার প্রতিশ্রুতি এবং কেন্দ্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
মিছিলের নেতৃত্ব দেন কোচবিহার ১ নম্বর বি ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি আব্দুল কাদের হক। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী, যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যরা এবং মহিলা তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। ঘেঘিরঘাট বাজার চত্বরে জড়ো হওয়া এই মিছিলে স্থানীয় বাসিন্দারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন, যা প্রমাণ করে যে বাংলার মানুষ তাদের নেত্রী এবং রাজ্যের সম্মানের প্রতি কতটা সংবেদনশীল। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা একযোগে ঘোষণা করেন, “বাংলার অপমান আমরা সহ্য করবো না” এবং “কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে একত্রিত হোন”। এই স্লোগানগুলো ঘেঘিরঘাটের আকাশে প্রতিধ্বনিত হয়ে বাংলার জনমানসের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য শুধুমাত্র একজন জনপ্রতিনিধির প্রতি আক্রমণ নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জনগণের গর্বের প্রতি অপমান। এক্স-এ প্রকাশিত একটি পোস্টে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র লিখেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে বিজেপি নেতাদের কুরুচিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে তৃণমূল মহিলা শাখার মিছিল! জনগণের গর্জন, বাংলা-বিরোধী বিজেপির বিসর্জন!” এই পোস্টটি জনগণের মধ্যে এই প্রতিবাদের গভীরতা ও ব্যাপকতাকে প্রতিফলিত করে।
আব্দুল কাদের হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, “মমতা ব্যানার্জি শুধু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনি বাংলার গর্ব। তাঁর প্রতি কোনো অপমান আমরা মেনে নেব না। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে বারবার বঞ্চিত করছে, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে কৃপণতা করছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাদের রাজ্যের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। এর বিরুদ্ধে আমরা রাস্তায় নেমেছি এবং প্রয়োজনে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।” তিনি আরও জানান, বাংলার উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, কিন্তু কেন্দ্রের বৈষম্যমূলক নীতি রাজ্যের উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি বাংলার জনগণের জীবনযাত্রার ওপরও প্রভাব ফেলছে। উন্নয়ন প্রকল্পে পর্যাপ্ত তহবিল না পাওয়ার কারণে রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা মমতা দিদির পাশে আছি। তিনি আমাদের জন্য দিনরাত কাজ করছেন, কিন্তু কেন্দ্র তাঁর প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা আমরা মেনে নেব না।”
এই প্রতিবাদ মিছিলে তৃণমূল কংগ্রেসের যুব শাখা এবং মহিলা শাখার সদস্যরা বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন। মহিলা তৃণমূলের একজন সদস্য বলেন, “মমতা ব্যানার্জি আমাদের মা, আমাদের নেত্রী। তাঁকে অপমান করা মানে আমাদের সকলের অপমান। আমরা এই মিছিলের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই যে বাংলার মানুষ তাঁর পাশে আছে।” মিছিলে উত্থাপিত স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল “মমতা ব্যানার্জির সম্মান, বাংলার সম্মান” এবং “বাংলার উন্নয়ন, আমাদের অধিকার”। এই স্লোগানগুলো জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং প্রতিবাদের তীব্রতাকে আরও জোরদার করে।
এই প্রতিবাদ মিছিলটি কোচবিহার জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সম্প্রতি বিজেপি নেতাদের দ্বারা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের এই আন্দোলন রাজ্যজুড়ে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে। এক্স-এ প্রকাশিত আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, “বাংলার মানুষ তাদের নেত্রী মমতা ব্যানার্জির পাশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রের বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ ক্রমশ বৃহত্তর হবে।” এই পোস্টটি জনগণের মধ্যে এই আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতা এবং তীব্রতার প্রমাণ দেয়।
আব্দুল কাদের হক আরও জানান, তৃণমূল কংগ্রেস ভবিষ্যতে এই ধরনের বৈষম্য এবং অপমানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছি, কিন্তু যদি বাংলার সম্মান এবং উন্নয়নের প্রতি এই বৈষম্য অব্যাহত থাকে, তবে আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব।” তিনি দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং সাধারণ মানুষকে এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।
এই প্রতিবাদ মিছিলের মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার জনগণের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে তারা রাজ্যের সম্মান এবং উন্নয়নের জন্য অটল। ঘেঘিরঘাটের এই মিছিল কেবল একটি শুরু, ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতিবাদ আরও জোরদার হবে বলে দলীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।