জলপাইগুড়ি: দুর্গাপুজোর আগেই হঠাৎ করে ডুয়ার্সের বানারহাট ব্লকে বন্ধ হয়ে গেল একসাথে তিনটি চা (Dooars Tea) বাগান। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চামুর্চি, রেডব্যাংক ও সুরেন্দ্রনগর চা বাগান বন্ধ করে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে। রাতারাতি এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা শুক্রবার সকাল থেকেই বাগানের গেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পাশাপাশি ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে সামিল হন তাঁরা।
অভিযোগ, দুর্গাপুজোর আগে শ্রমিকদের বোনাস দিতে না চেয়ে মালিকপক্ষ রাতারাতি পালিয়েছে। বাগানের ম্যানেজার বাংলোতে পাহারা না থাকা, কারখানার গেটে প্রহরী না দেখা যাওয়ায় শ্রমিকদের সন্দেহ হয়। এরপরই পুরো ঘটনা সামনে আসে এবং রাতেই শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এলাকার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব জানান, “মালিকরা বোনাস না দিয়ে চুপিসারে বাগান বন্ধ করে গিয়েছে। শ্রমিকদের পরিবার এখন চরম অনিশ্চয়তায়।” সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি ইতিমধ্যেই শ্রমদপ্তর ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
শ্রমিক পরিবারগুলির মতে, এই সময়ে বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের উৎসব একেবারেই অন্ধকারে ঢেকে গেল। সাধারণত চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ও উৎসবের বোনাসের উপর নির্ভরশীল। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সংসারে অভাব দেখা দেয়।
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও পরিস্থিতি সামলানো সহজ হয়নি। বিক্ষোভরত শ্রমিকরা পুলিশের সামনেই ক্ষোভ উগরে দেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তবে বাগানগুলি কবে আবার খুলবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, ডুয়ার্সে এর আগেও বহুবার উৎসবের মুখে মালিকপক্ষ চা বাগান বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। এতে শুধু শ্রমিকই নয়, পুরো অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারও একই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চা শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার যদি অবিলম্বে হস্তক্ষেপ না করে তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। শুধু বোনাস নয়, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। ডুয়ার্সের তিন বাগান হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। এই ঘটনা রাজ্যের চা শিল্পের গভীর সঙ্কটকেই আবার সামনে নিয়ে এল।