আচমকা বন্ধ চা বাগান, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বিজেপির

অয়ন দে,উত্তরবঙ্গ: আলিপুরদুয়ার জেলার ডুয়ার্স এলাকার অন্যতম প্রাচীন চা বাগান (Tea Garden) জয়বীরপাড়া হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল। শনিবার সকালে প্রতিদিনের মতো কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকরা দেখে বাগানের ফটকে ঝুলছে “প্রি-লকআউট” নোটিশ। ততক্ষণে মালিকপক্ষ বাগান ছেড়ে সরে পড়েছে। বাগান বন্ধ হওয়ার এই খবরে হতবাক শ্রমিকমহল। সমস্যায় পড়েছেন প্রায় ৬৩৬ জন চা শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার।

Advertisements

চা শ্রমিকদের দাবি, বহুদিন ধরেই বাগান কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র বেতন দিত, কোনওরকম অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা বা সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করত না। এদিন ছিল শ্রমিকদের বেতন পাওয়ার দিন। কিন্তু বেতন না দিয়ে, কোনও রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করে চলে যায়। ফলে আর্থিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তায় ভুগছেন চা শ্রমিকরা।

   

বাগান বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়ার পরই শনিবার জয়বীরপাড়ায় পৌঁছন আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা। তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পুরো পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন। সাংসদ অভিযোগ করেন, “এই রাজ্যে একের পর এক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বড় আন্দোলনে নামব।” তিনি আরও জানান, বিজেপির শ্রমিক সংগঠন BTWU (Bharatiya Tea Workers’ Union) পক্ষ থেকে অচিরেই বড়সড় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা উত্তম সাহা জানান, আজ শ্রম দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল চা বাগান সমস্যার সমাধানে। কিন্তু বৈঠকের আগেই মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই ঘটনায় চা শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা বিপদের মুখে পড়েছে। আমরা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চাইছি।”

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডুয়ার্স অঞ্চলের চা শিল্প পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বহু মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাগান বন্ধ হওয়া, মালিক পক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং শ্রমিকদের প্রতি উপেক্ষা এই খাতকে দিন দিন দুর্বল করে দিচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবরকম প্রশাসনিক সহায়তা করা হবে। তবে এখনো পর্যন্ত মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

জয়বীরপাড়া চা বাগানের এই অপ্রত্যাশিত বন্ধ এবং শ্রমিকদের অনিশ্চয়তা ফের রাজ্যের চা শিল্পে স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। আগামী দিনে এই আন্দোলন আরও তীব্র হলে, তা রাজ্য রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।