অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: ‘‘সাপের কামড়ে (Snakebite Awareness) ওঝা নয়, সরাসরি হাসপাতালে চলো’’— এই বার্তা পৌঁছে দিতেই আলিপুরদুয়ার থেকে আসাম পর্যন্ত এক বিশেষ সাইকেল র্যালির আয়োজন করল আলিপুরদুয়ার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সাপের কামড়ে (Snakebite Awareness) মৃত্যুহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবার পথে নামলেন আলিপুরদুয়ার জেলার বিজ্ঞানমনস্ক মানুষরা।
এই সাইকেল র্যালিতে অংশগ্রহণ করেছেন ১২ জন স্বেচ্ছাসেবক। উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ার পুরসভার কাউন্সিলর গাগি তালুকদার, বিশিষ্ট শিক্ষক সঞ্চয় ঘোষ, সমাজকর্মী মাধবী দে সরকার, সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান অজয় তেওয়ারি, সভাপতি জ্যোতির্ময় রায় এবং সম্পাদক কৌশিক দে সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সর্পবন্ধুরা।
সাইকেল র্যালির অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় রয়েছেন নন্দ দুলাল সরকার, গৌতম, সন্তু, রোহিত, বকুল, প্রদীপ সহ আরও অনেক উৎসাহী তরুণ।
সাপের কামড়ে (Snakebite Awareness) দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা:
সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে সাপের কামড়ের পরও অনেক সময় রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। ফলে বিষাক্ত সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু হয়।
সঞ্চয় ঘোষ বলেন, ‘‘ওঝার ঝাড়ফুঁকে নয়, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিই পারে সাপের বিষের প্রকৃত চিকিৎসা করতে।’’ তিনি আরও জানান, ‘‘অনেক সময় ভেন্টিলেশনের অভাবে রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি, প্রতিটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-ভেনম ইনজেকশন মজুত রাখা হোক। একই সঙ্গে প্রতিটি মহকুমা হাসপাতালে ডায়ালিসিস এবং ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।’’
মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ:
সাইকেল র্যালির পথ চলার সময় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। প্রজেক্টরের মাধ্যমে সাপের কামড়ে প্রাথমিক করণীয় বিষয়ক সচেতনতামূলক ভিডিও দেখানো হয়। বিশেষত গ্রামের মানুষদের বোঝানো হয়, সাপে কাটলে গায়ে তেল মালিশ, কাটা জায়গা চেঁচে রক্ত বার করা কিংবা ওঝার ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে সময় নষ্ট না করে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে যাওয়াই একমাত্র সঠিক উপায়।
সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিকাঠামোগত দাবি:
সংস্থার পক্ষ থেকে আরও দাবি জানানো হয়েছে, অ্যান্টি-ভেনম ইনজেকশনের পর্যাপ্ততা, সাপে কাটা রোগীর জন্য জরুরি রেফারেল ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা এবং হাসপাতালগুলিতে সাপে কামড়ের বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক।
অজয় তেওয়ারি বলেন, ‘‘এটা শুধু একটা সাইকেল র্যালি নয়, এটা মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য একটা আন্দোলন।’’
Snakebite Awareness Campaign Alipurduar-এর এই উদ্যোগ শুধু আলিপুরদুয়ার নয়, সমগ্র উত্তরবঙ্গ জুড়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে এসেছে। সাপে কাটার মতো জরুরি পরিস্থিতিতে “Hospital Not Witchcraft” এই স্লোগানকে সামনে রেখে Alipurduar to Assam Cycle Rally 2025 জনসাধারণের মধ্যে যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন উদ্যোগ আগামী দিনে সাপের কামড়ে মৃত্যুহার কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। WHO-র Snakebite Death Reduction Target 2030-এর লক্ষ্যপূরণে পশ্চিমবঙ্গের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ।
