শিলিগুড়ি: বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে নেপালে বাংলাদেশিদের অবৈধ প্রবেশের খবর উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (SIR) কার্যকর হওয়ার পর এই করিডরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে, যা সীমান্তে অস্থিরতা বাড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানাচ্ছে, গত সপ্তাহে অন্তত ১৫-২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে শিলিগুড়ির পানিট্যাংকি চেকপোস্ট দিয়ে নেপালের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে ধরা পড়েছে। তারা ভুয়া পরিচয়পত্র এবং স্থানীয় গাইডের সাহায্যে করিডর অতিক্রম করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এই ঘটনা শুধু অভিবাসনের সমস্যা নয়, বরং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির সূচনা করেছে।
কয়েক দশক পর বিরল কীর্তিতে ‘নোট বুকে’ নাম উঠল এই টেস্টের
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (ULFA), আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত আসামের বাংলাদেশি তানজিম (AuBT) এবং হিজবুল মুজাহিদিন (HuT)-এর মতো উগ্রপন্থী গোষ্ঠী এই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ক্যাডার এবং হাতিয়ার পাচার করতে পারে। নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাস দুটি এই অঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে গুরুতর, কারণ শীতকালীন কুয়াশা এবং কম নজরদারির কারণে সীমান্ত অতিক্রম সহজ হয়ে যায়।
শিলিগুড়ি করিডর, যা ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ জমির ফালি তার সবচেয়ে সরু অংশ মাত্র ২০-২২ কিলোমিটার চওড়া। এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডকে সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করে, এবং পশ্চিমে নেপাল, দক্ষিণে বাংলাদেশ এবং উত্তরে ভুটানের সীমান্তবর্তী।
১৯৪৭-এর দেশভাগের ফলে এই করিডর গড়ে উঠেছে, এবং চীনের চুম্বি ভ্যালির থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি বাণিজ্য, পর্যটন এবং যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হলেও, নিরাপত্তার দিক থেকে সবসময় সতর্কতার খবর রাখে।
গতকাল রাতে শিলিগুড়ির পানিট্যাংকি চেকপোস্টে বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) একটি সন্দেহজনক গ্রুপকে আটক করে, যাদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি ছিলেন। তারা নেপালের কাঙ্কারভিট্টা বর্ডার দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, দাবি করে যে তারা ‘পর্যটক’। কিন্তু তাদের কাছে পাওয়া মোবাইল ফোনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার ছবি এবং যোগাযোগের রেকর্ড সন্দেহ জাগিয়েছে।
বিএসএফের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “SIR কার্যকর হওয়ার পর স্থানীয় অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বেড়েছে, কিন্তু সীমান্ত নজরদারি বাড়ানো দরকার। এই প্রবেশের পিছনে অভিবাসনের পাশাপাশি অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।”পশ্চিমবঙ্গে SIR-এর বাস্তবায়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নেওয়া একটি পদক্ষেপ, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য করিডর অঞ্চলে বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। কিন্তু এর ফলে স্থানীয় পরিবহন এবং যানজট বেড়েছে, যা সীমান্তে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে, এবং অনেক নাগরিক অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার কারণে প্রতিবেশী দেশে পালানোর চেষ্টা করছেন। নেপালের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ না থাকায় শিলিগুড়ি দিয়ে যাওয়া তাদের একমাত্র পথ। স্থানীয় এনজিও ‘বর্ডারলেস হিউম্যান রাইটস’ জানাচ্ছে, গত এক মাসে অন্তত ৫০ জনেরও বেশি এমন চেষ্টা ধরা পড়েছে।
\একজন আটক হওয়া বাংলাদেশি বলেছেন, “দেশে অস্থিরতা, কাজ নেই। নেপালে যাই, সেখান থেকে অন্য কোথাও যাব।” কিন্তু এই প্রবেশের পিছনে শুধু অভিবাসন নয়, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রও লুকিয়ে আছে।
