উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের ঢেকে গেল ‘চিকেন নেক’

siliguri-chicken-neck-corridor-under-highest-security-india-news

কলকাতা: ‘চিকেন নেক’ করিডোরকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়ে ঢেকে ফেলেছে কেন্দ্র। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতায় দ্রুত বদলে যাওয়া প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থান ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার ঝুঁকি মাথায় রেখে এই নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিল ভারত। দেশের গোটা পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিকাঠামোর সঙ্গে বাকি ভারতবর্ষকে যুক্ত করে রেখেছে এই চিকেন নেক এলাকা— তাই কোনও পরিস্থিতিতেই এর নিরাপত্তায় আপস নয়, এই বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisements

সম্প্রতি নর্থ ব্লকে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB)–র সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক বিরল উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এক টেবিলে বসলেন CISF, BSF, SSB, ITBP, RPF, ভারতীয় সেনা, বায়ুসেনা, সামরিক পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং অন্যান্য ইউনিফায়েড ফোর্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সিদ্ধান্ত হয়েছে, চিকেন নেক করিডোরে ২৪×৭ নজরদারি, অতিরিক্ত ড্রোন মনিটরিং, রোড–রেল–এয়ার রুটে শক্তিশালী পেট্রোলিং এবং সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

   

সময়সীমা বাড়ানোর দাবিতে BLO দের CEO দফতর অভিযান

গোয়েন্দা মহল মনে করছে, সীমান্তজুড়ে দ্রুত পাল্টে যাওয়া বাস্তবতা নজরদারি বাড়ানোর প্রধান কারণ। চীন-মায়ানমার সংঘাত, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন, আর ভুটানের সঙ্গে কূটনৈতিক সংবেদনশীলতা তিন দিকের চাপ একসঙ্গে এসে দাঁড়িয়েছে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা মানচিত্রে। আর সেই কারণেই চিকেন নেক কোনওভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ুক, এই আশঙ্কা কেন্দ্র একেবারে মূলে উপড়ে ফেলতে চাইছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ভারত জানে উত্তর–পূর্বকে বিচ্ছিন্ন করার সবচেয়ে সহজ পথ একই জায়গা, এই ২২ কিমি করিডোর। তাই কোনও অঘটন অপেক্ষা না করে আগাম প্রস্তুতিতে নামা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এর আশেপাশে ব্যারাক, ফায়ারিং রেঞ্জ, দ্রুত প্রতিরক্ষা সড়ক এবং সামরিক লজিস্টিকস সম্প্রসারণের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের পথে।

Advertisements

এই পরিস্থিতিতে আলোড়ন তৈরি করেছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মন্তব্যও। তিনি স্পষ্ট ভাষায় ইঙ্গিত দিয়েছেন “ভারতের সার্বভৌমত্বকে কেউ চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করলে, চিকেন নেক করিডোর প্রয়োজন হলে বিস্তৃত করতেও পিছপা হব না।” ভূ-রাজনৈতিক মহলে এই বার্তা শুধু প্রতিবেশী নয়, দূরবর্তী শক্তিশালী শক্তিগুলোর উদ্দেশ্যেও পাঠানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের মতে, গত কয়েকদিনে এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর চলাচল দৃশ্যগতভাবে বেড়েছে। জাতীয় সড়ক, রেলওয়ে স্টেশন, এয়ার ফোর্স হাব, পেট্রল পাম্প, লজিস্টিকস করিডোর সব জায়গাতেই কড়া স্ক্যানিং ব্যবস্থা চালু। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিএসএফ ও এসএসবি সদস্যদের যৌথ টহল নতুন করে সাজানো হয়েছে। বাণিজ্যিক যান ও পর্যটক গাড়িগুলিকেও চোখে না লাগা রুটিন চেকের আওতায় আনা হয়েছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক জানিয়েছে, এটি কোনও আতঙ্কের বার্তা নয়, বরং প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তা কৌশল— যাতে কোনও সন্ত্রাসবাদী বা বিদেশি অপশক্তি সুযোগ নিতে না পারে। তবে সামরিক সূত্র বলছে, পরিস্থিতি আপাত শান্ত হলেও এটি স্ট্যান্ডার্ড হাই-লেভেল মিলিটারি রেডিনেসের সময়।

দেশজুড়ে মনোযোগ যখন পশ্চিম এশিয়া সংঘাত বা দক্ষিণ চীন সাগর উত্তেজনায় বেশি, তখন নীরবে পূর্ব সীমান্তকে অদৃশ্য ঢাল দিয়ে শক্ত করে ফেলল ভারত। বার্তা স্পষ্ট — উত্তর–পূর্ব শুধুই ভারতের অংশ নয়, ভারতের কৌশলগত শক্তির কেন্দ্র। আর চিকেন নেক করিডোর— কোনও পরিস্থিতিতেই আলোচনার বিষয় নয়, আপোসের তো প্রশ্নই নেই।