বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধে’ হরিয়ানার গুরুগ্রামে এক শীতলকুচির যুবককে (Shitalkuchi Youth) আটক করা হয়েছে—এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ সামনে এনেছেন পরিবারের সদস্যরা। অভিযুক্ত যুবকের নাম হালাল মিয়া। তাঁর বাড়ি কোচবিহার জেলার শীতলকুচি ব্লকের বড় গদাইখোড়া গ্রামে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৯ জুলাই সকালবেলা গুরুগ্রামের সেক্টর ৪৭ এলাকা থেকে হালালকে হঠাৎই আটক করে পুলিশ। তিনি সেখানে অটোচালক হিসেবে কাজ করতেন এবং প্রায় এক বছর আগে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে গিয়ে বসবাস শুরু করেছিলেন। সেই দিন সকালবেলা কাজে বেরিয়েই আর ফেরেননি তিনি।
হালালের ভাই সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমরা প্রথমে বুঝতেই পারিনি কী হয়েছে। পরে স্থানীয় সূত্রে জানতে পারি, পুলিস তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। কোনও কারণ না দেখিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে। আমরা শুনেছি, সে বাংলা বলছিল—আর সেটাই নাকি পুলিশের সন্দেহের কারণ!”
পরিবারের দাবি, হালালের বিরুদ্ধে কোনও FIR পর্যন্ত দায়ের হয়নি। তাঁর আধার কার্ড, ভোটার আইডি, সমস্ত নথিপত্র থানায় পাঠানো হলেও, তা গ্রহণ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে পুলিস। পুলিশের এই মনোভাব ঘিরেই ক্ষুব্ধ তাঁর পরিবার ও গ্রামবাসীরা।
হালালের ভাই আরও বলেন, “আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন। একজন পরিশ্রমী, সাধারণ মানুষ যিনি পরিবার নিয়ে অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেছেন, তাঁকে শুধুমাত্র মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য এভাবে আটক রাখা যায় না। এটা আমাদের সংবিধান বিরুদ্ধ।”
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি একাধিক সভায় ভাষাভিত্তিক বৈষম্য ও পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি হেনস্থার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, “বাংলা বলার জন্য কেউ যদি হেনস্থার শিকার হন, তা বরদাস্ত করা হবে না। দেশের যেকোনও প্রান্তে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকেরা কাজের জন্য যাচ্ছেন, তাঁরা দেশের নাগরিক, তাঁরা অপরাধী নন।”
এই ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে শীতলকুচির বড় গদাইখোড়া গ্রামে। স্থানীয় মানুষরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, “একটা ভাষা কখনও অপরাধ হতে পারে না। হিন্দি না বললেই কি কেউ সন্দেহভাজন হয়ে যায়?”
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে—ভাষাভিত্তিক বৈষম্য কতটা প্রকট ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে? পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত? বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যজনিত এই আচরণ কতটা সাংবিধানিক, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না মিললেও, পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, হালাল মিয়াকে দ্রুত মুক্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি। কারণ একজন ব্যক্তির মাতৃভাষা তার পরিচয়ের প্রতীক—তা কখনও অপরাধ হতে পারে না।