অয়ন দে, উত্তরবঙ্গ: ডুয়ার্সের গ্রীষ্মকালের তীব্র দাবদাহের মধ্যেই এবার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে পানীয় জলের সংকটে (Dooars drinking water problem)। বিশেষ করে সাঁতালি চা বাগানের আউট ডিভিশনের শ্রমিক মহল্লায় পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, তার ওপর পানীয় জলের জন্য প্রতিদিন দূরদূরান্তে হাঁটতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার মানুষজন দিনের পর দিন অসহ্য গরমের মধ্যে লাইন দিয়ে দূর থেকে জল সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারি তরফে জল সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় পাইপ লাইন বসানো হলেও এখনো পর্যন্ত সেই পরিষেবা কার্যকর হয়নি। ফলে মানুষজন কার্যত পরিষেবাবঞ্চিত।
সাঁতালি আউট ডিভিশনের শ্রমিক কুইয়ার্টার এলাকায় পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, “দুপুরের রোদে ১–২ কিলোমিটার হেঁটে জল আনতে হচ্ছে। বাড়িতে বাচ্চা, বৃদ্ধা—সবাই কষ্ট পাচ্ছে।”
এই জলসংকটকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোরও তুঙ্গে উঠেছে। বিজেপি নেতা অলোক মিত্র কড়া ভাষায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন,“পি এইচ ই পাইপ বসিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সঠিক কাজ হয়নি। বহু জায়গায় পাইপ বসানোর নাম করে লোক দেখানো হয়েছে। ঘরে ঘরে জল তো দূরের কথা, ট্যাপে ফোঁটাও জল আসছে না। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সম্পূর্ণ ব্যর্থ।”
অলোকবাবুর দাবি, এই পানীয় জলের সংকট ইচ্ছাকৃত গাফিলতির ফল। রাজ্য সরকার বারংবার প্রকল্প শুরু করেও মানুষের স্বার্থে শেষ করে না, এমনটাই তার অভিযোগ।
তবে এই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত মালঙ্গী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রঞ্জিতা সূত্রধর। তিনি বলেন, “পাইপ লাইনের কাজ চলছে। কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে দেরি হচ্ছে, তবে খুব শীঘ্রই পরিষেবা চালু হবে। জনগণকে একটু ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করছি।”
এই মুহূর্তে ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগান সংলগ্ন এলাকায় পানীয় জলের চাহিদা তুঙ্গে। দীর্ঘ গ্রীষ্মের মরশুমে এমন সংকট প্রায় প্রতি বছরই দেখা গেলেও, সঠিক ও স্থায়ী সমাধান আজও অধরা।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, এমনটাই মত পরিবেশবিদদেরও। তাঁরা বলছেন, “চা বাগান এলাকায় শ্রমিকদের জন্য পানীয় জল না থাকাটা একটি মানবিক সংকট। প্রকল্প শুরুর পরেও জল না পাওয়ার অর্থ সরকারি দায় এড়ানো যায় না।”
পানীয় জল সংকট এবং প্রশাসনিক গাফিলতি নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বাড়ছে। বাসিন্দাদের একটাই দাবি—“আমাদের বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়।”