উদ্বাস্তু হিন্দুদের গোপন সিএএ ক্যাম্প, এলাকায় বিক্ষোভ

উদ্বাস্তু হিন্দুদের গোপন সিএএ ক্যাম্প, এলাকায় বিক্ষোভ

ঝাড়গ্রাম: রাজ কলেজ কলোনিতে সকাল থেকেই অস্বাভাবিক নড়াচড়া নজরে আসে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অভিযোগ, উদ্বাস্তু হিন্দুদের সাহায্যের নামে গোপনে সিএএ ক্যাম্প (Jhargram CAA camp) চালানো হচ্ছিল সেখানে। কিছুদিন ধরেই পূর্ববঙ্গীয় উদ্বাস্তু কমিটি নামে একটি সংস্থা এলাকায় এবং বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সিএএ সংক্রান্ত “সহায়তা শিবির”-এর প্রচার চালাচ্ছিল। কিন্তু রবিবার বড় প্যান্ডেল খাটিয়ে ক্যাম্প শুরু হতেই পরিস্থিতি হঠাৎই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।

Advertisements

 

   

সকালে ক্যাম্প খোলার পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। অভিযোগ, ক্যাম্পে উপস্থিত কমিটির সদস্যরা উদ্বাস্তু হিন্দুদের নথি যাচাই, ফর্ম পূরণ এবং সিএএ সম্পর্কিত তথাকথিত সাহায্য করছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তখনই প্রশ্ন তোলেন এ ধরনের ক্যাম্প চালানোর সরকারি অনুমতি কি আছে? কে অনুমোদন দিয়েছে?

এই খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পুলিশ প্রথমেই প্যান্ডেল ভেঙে ক্যাম্প বন্ধের নির্দেশ দেয়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্যান্ডেল সরানো হলেও, এলাকাবাসীর ক্ষোভ প্রশমিত হয় না।

অভিযোগ, প্যান্ডেল সরানোর কিছুক্ষণ পরই কমিটির তিন সদস্য নাকি পাশের একটি বাড়ির ভিতরে গোপনভাবে ফের ক্যাম্প চালানো শুরু করেন। সংবাদ ছড়াতেই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে তাঁদের ঘিরে ফেলেন এবং প্রশ্ন করতে থাকেন “কোথায় অনুমতি? কেন গোপনে সিএএ ক্যাম্প?”

এই অবস্থায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ঝাড়গ্রাম পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গৌতম মাহাতো এবং ঝাড়গ্রাম শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নবু গোয়ালা। তারা উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং কমিটির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

Advertisements

চাপে পড়ে তিন সদস্য দাবি করেন, “এটি কোনও সরকারি ক্যাম্প নয়। আমরা কেবল উদ্বাস্তুদের নথি সম্পর্কে সাহায্য করতে এসেছিলাম।” কিন্তু স্থানীয়রা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, সংবেদনশীল আইন সিএএ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্যই গোপনে এই শিবির চালানো হচ্ছিল। কোনও সরকারি ঘোষণার আগেই এ ধরনের ক্যাম্প পরিচালনা মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে পারে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন। নবু গোয়ালা বলেন, “বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করছে। মানুষের মনকে ভুল পথে চালিত করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে।”

অন্যদিকে, পুলিশ কমিটির সদস্যদের থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু এলাকায় উত্তেজনার পরিবেশ এখনো বজায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা চান এ ধরনের কোনও উদ্যোগ যাতে ভবিষ্যতে গোপনে না হয় তার ওপর প্রশাসন কঠোর নজরদারি রাখুক।

এদিকে, প্রশ্ন উঠছে সিএএ কার্যকর করার সরকারি বিজ্ঞপ্তি এখনো না এলেও কেন এর আগে গোপনে নথি সংগ্রহ বা যাচাইয়ের মতো কার্যক্রম চালানো হবে? এটি কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? নাকি উদ্বাস্তু পরিচয়ে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা? পুলিশের তদন্ত না শেষ হওয়া পর্যন্ত এসব প্রশ্নের উত্তর অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে।