দার্জিলিং জেলার খড়িবাড়ির একটি সরকারি স্কুলে সরস্বতী পূজা আয়োজন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন এবং পূজা আয়োজনের দাবি জানান। প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে সরস্বতী পূজা আয়োজন করা হলেও এবার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে তা বাতিল করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, “এবার কিছু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সরস্বতী পূজা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি”। তবে শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি এবং বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “সরস্বতী পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি আমাদের শিক্ষার প্রতীক। স্কুলে পূজা না হওয়ায় আমরা খুবই হতাশ।”
অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, বিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত অনৈতিক ও অযৌক্তিক। একজন অভিভাবক বলেন, “সরস্বতী পূজা বহু বছর ধরে আমাদের বিদ্যালয়ে পালিত হয়ে আসছে। হঠাৎ করে এ বছর কেন বন্ধ করা হলো, তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।”
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের কারণে এবার পূজা করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিভাবক ও স্থানীয়দের একাংশ বলছেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একজন শিক্ষক জানান, “বিদ্যালয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি মেনে চলার নির্দেশ এসেছে, তাই পূজা আয়োজন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করছি।” শিক্ষার্থীরা প্রথমে স্কুলের ভেতরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলেন। পরে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি এতে যোগ দেন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “শিক্ষার্থীরা পূজার অনুমতির দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিল। আমরা তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছি।” বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েই যেকোনো ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে পরবর্তী বছর পূজা আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
সরস্বতী পূজা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ানোর প্রতীক। খড়িবাড়ির বিদ্যালয়ে পূজা বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বনের বার্তা দেয়।