দার্জিলিং: উত্তরবঙ্গে ফের ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী কয়েকদিন দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলে লাল সতর্কতা জারি করেছে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সান্দাকফু (Sandakphu) পর্যটনকেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সুকিয়া পোখরি বন বিভাগের উন্নয়ন আধিকারিক আরোগ্য গোয়া জানান, “আবহাওয়া দপ্তর থেকে আমরা সতর্কতা পেয়েছি। পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হলে রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সেই কারণেই আপাতত সান্দাকফু বন্ধ রাখা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “লাল সতর্কতা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কোনো পর্যটক বা ট্রেকারকে সান্দাকফু বা সিঙ্গালীলা অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।”
সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ (উচ্চতা প্রায় ৩৬৩৬ মিটার), যা মূলত ট্রেকিংপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের অন্যতম গন্তব্য। এখান থেকে এক নজরে দেখা যায় বিশ্বের চারটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ — এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোতসে ও মাকালু। কিন্তু প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাসে প্রশাসন কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
সিঙ্গালীলা ল্যান্ড রোভার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চন্দন প্রধান জানান, “আজ ছয়টি পর্যটকবাহী গাড়ি নেমে গিয়েছে। বাকিরা আগামীকাল সকালেই ফিরে আসবেন।” প্রশাসনের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পাহাড়ে আর নতুন করে কোনো পর্যটককে উঠতে দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতেই হরপা বান ও অতি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়েছিল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। একাধিক সড়ক ভেসে গিয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ঘরবাড়ি, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন। এরপর রাজ্য প্রশাসন স্থির করেছে—আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেলেই আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে।
তাই এবার সেই নির্দেশ মেনেই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির আগেই সান্দাকফু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। পর্যটন দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ততক্ষণ বন্ধই থাকবে সান্দাকফু।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে সাময়িকভাবে পর্যটন ব্যবসায় প্রভাব পড়বে, কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্যের পদক্ষেপ একেবারে যথাযথ।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি উন্নত হলে ও সতর্কতা প্রত্যাহার হলে ফের পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে সান্দাকফু।



