‘চৈতন্যদেবের প্রকৃত উত্তরাধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’, ঋতব্রতের মন্তব্যে বিতর্ক

বাঁকুড়া: ইন্দাসে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনী সভায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Ritabrata Banerjee) মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তিনি প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে বলেন, “চৈতন্যদেবের প্রকৃত উত্তরাধিকারী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” তাঁর এই বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো ঝড় উঠেছে।

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্যে বলেন, “চৈতন্যদেবকে অনেকেই হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা বলেন। তিনি হেঁটে যাচ্ছেন আর তাঁর পেছনে লক্ষ মানুষ এগিয়ে চলেছেন। বাংলার অবিরাম যাত্রাপথে, চৈতন্যদেবের সেই উত্তরাধিকার আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই সুরক্ষিত। চৈতন্যদেবের মতো তিনিও যখন পথে নামেন, তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর সঙ্গে হাঁটেন।”

Advertisements

এই বক্তব্যের পর তিনি আরও বলেন, “সাড়ে পাঁচশো বছর আগে চৈতন্যদেব ছিলেন ভারতের প্রথম সমাজ সংস্কারক ও বিপ্লবী। তিনি বাংলার মধ্যভাগ থেকে যে সংস্কারের লড়াই শুরু করেছিলেন, তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। আজ বিজেপির বিরুদ্ধে যে লড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালাচ্ছেন, সেটাই সেই চৈতন্যদেবীয় ধারার ধারাবাহিকতা। তাই তিনিই বাংলার মানবতাবাদের প্রকৃত উত্তরাধিকারী।”

তবে ঋতব্রতের এই মন্তব্যের পরেই রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, “এই ধরনের তুলনা বাঙালির ভাবাবেগে আঘাত হানে। চৈতন্যদেব ছিলেন এক ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ, তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতার তুলনা করা অশোভন।”

বিজেপির আরও অভিযোগ, “বিষ্ণুপুর-ইন্দাসে একের পর এক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অথচ শ্রমিক নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সে বিষয়ে একটি শব্দও বলছেন না। বরং মুখ্যমন্ত্রীর গুণগান করে ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করছেন।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, এর আগেও তৃণমূলের একাধিক নেতা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করেছেন দেবী দুর্গা বা মা সারদার সঙ্গে। সেই ধারাতেই এবার ঋতব্রতের মন্তব্যে নতুন করে বিতর্কের আগুন জ্বলে উঠল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্যকে বিজেপি অবশ্যই নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করবে। তাঁদের ধারণা, ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক ‘অধ্যাত্মিক নেত্রী’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টাই তৃণমূলের কৌশল হতে পারে।

অন্যদিকে, তৃণমূলের একাংশের দাবি, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেননি। তিনি কেবলই বাংলার সংস্কার, মানবতা ও আন্দোলনের ধারাবাহিকতার প্রতীক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীকে উল্লেখ করেছেন।

ইন্দাস থেকে শুরু করে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত এখন এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। কেউ ঋতব্রতের বক্তব্যের প্রশংসা করছেন, আবার কেউ বলছেন— “রাজনীতিতে ধর্ম টেনে এনে ইতিহাস বিকৃতি করা হচ্ছে।”

Advertisements