খগেন মুর্মুর উপর হামলায় NIA তদন্ত চেয়ে মামলা কলকাতা হাইকোর্টে

কলকাতা: উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর (Khagen Murmu) উপর হামলার ঘটনায় ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা ছড়াল রাজ্যে। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার…

কলকাতা: উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর (Khagen Murmu) উপর হামলার ঘটনায় ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা ছড়াল রাজ্যে। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হল একাধিক আবেদন। একদিকে অ্যাডভোকেট অনিন্দ্য সুন্দর দাস জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের করেন, অন্যদিকে বিজেপি নেতা বিজন গোস্বামী আলাদা একটি রিট পিটিশন জমা দেন। দুই ক্ষেত্রেই দাবি—ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হোক জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) ও কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (CBI)-এর হাতে।

Advertisements

ঘটনাটি ঘটে ৬ অক্টোবর। সেদিন মালদা উত্তর কেন্দ্রের সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ নাগরাকাটা অঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে যান। অভিযোগ, তাঁদের কনভয়ের উপর একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায়। পাথর, লাঠি, এমনকি জুতো ছোঁড়া হয় গাড়িগুলির দিকে। ঘটনায় খগেন মুর্মু গুরুতর জখম হন। প্রথমে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে তাঁকে জলপাইগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে তিনি বর্তমানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

বিজ্ঞাপন

অ্যাডভোকেট অনিন্দ্য সুন্দর দাস আদালতে যুক্তি দেন, “এই ঘটনা সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘটেছে, ফলে তদন্তে অনুপ্রবেশকারীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি।” তিনি আরও বলেন, সাংসদ মুর্মু যেহেতু তফসিলি উপজাতি (ST) সম্প্রদায়ের মানুষ, তাই তদন্তে এসসি-এসটি আইনের ধারাগুলিও যুক্ত করতে হবে। সেইসঙ্গে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে এনআইএকে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন জানান তিনি।

অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারপতি কৌশিক চন্দ ও বিচারপতি ঋতব্রত মিত্র মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন এবং আগামী ১৪ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বিজেপি নেতা বিজন গোস্বামীর দায়ের করা পৃথক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, পুলিশ এই ঘটনায় কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। তাঁর পক্ষে আইনজীবী ময়ুখ মুখার্জি আদালতে বলেন, “পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করে দোষীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে হবে।” তাঁরও দাবি, স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা সন্দেহজনক হওয়ায় তদন্তের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দিতে হবে।

রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, রাজ্যে বিরোধী দলের প্রতিনিধি ও সাংসদের উপর ধারাবাহিক হামলা হচ্ছে, আর নাগরাকাটার ঘটনাটি তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, “স্থানীয়দের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরাকাটা অঞ্চল যেহেতু ভুটান সীমান্তের কাছে অবস্থিত, তাই অনুপ্রবেশ বা সীমান্ত সংযোগের বিষয়টি তদন্তে গুরুত্ব পেতে পারে। আদালতের এই নির্দেশের পর নজর এখন ১৪ অক্টোবরের শুনানির দিকে, যেখানে কেন্দ্রীয় তদন্তের বিষয়টি নিয়ে আদালত কী রায় দেয়, তা নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে।