উত্তরবঙ্গের (North Bengal) জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার ক্ষুদ্র চা উৎপাদকরা (STGs) সাম্প্রতিক প্রবল ও অবিরাম বর্ষণের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ক্ষুদ্র চা উৎপাদকদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনস (CISTA)-এর সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী মঙ্গলবার জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার পরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হবে।
জলপাইগুড়ির দোয়ারস এলাকার নাগরাকাটা ও ব্যানারহাট ব্লকে ক্ষুদ্র চা উৎপাদকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চক্রবর্তী বলেন, “অনেক চা বাগান এখনও জলে ডুবে রয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছি। এর পরই আমরা আর্থিক সহায়তার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করব।”
উত্তরবঙ্গে প্রায় ৫০,০০০ ক্ষুদ্র চা উৎপাদক কাজ করছেন, যাদের গড় চাষভূমি এক হেক্টারের কম। এই ক্ষুদ্র চা উৎপাদকরা রাজ্যের মোট চা উৎপাদনের প্রায় ৬৪ শতাংশের জন্য দায়ী। উত্তরবঙ্গ বার্ষিকভাবে প্রায় ২৮০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে।
চক্রবর্তী আরও জানান, ময়নাগুড়ির জালধকা নদীর পাশের চা বাগানগুলো দুই দিন ধরে জলে ডুবে রয়েছে। পানি কমতে শুরু করা এলাকায় চা গাছের ওপর মৃত্তিকা ও তুষারের পুরু স্তর জমে গেছে, যা ক্ষুদ্র চা উৎপাদকদের জন্য বড় আর্থিক ক্ষতি হবে।
এছাড়া, রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষতির কারণে তাজা চা পাতা কারখানায় পৌঁছানোও ব্যাহত হচ্ছে। “কর্মীদের অনুপস্থিতি এবং রাস্তা সমস্যার কারণে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও সরবরাহে বড় ধাক্কা আসবে,” চক্রবর্তী জানান।
ক্ষুদ্র চা উৎপাদকদের সংগঠন ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির জরুরি মূল্যায়ন শুরু করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগানগুলোতে দ্রুত সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
উত্তরবঙ্গের চা শিল্প রাজ্যের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্ষুদ্র চা উৎপাদকরা গ্রামীণ অর্থনীতির একটি মূল ভিত্তি। তাই তাদের ওপর এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব শমিত করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
চক্রবর্তী আশা করছেন যে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দ্রুত দেওয়া হবে, যাতে ক্ষুদ্র চা উৎপাদকরা উৎপাদন পুনরায় শুরু করতে পারে এবং শ্রমিকদের জীবিকা স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও, আর্থিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব কমানো সম্ভব হবে।