অয়ন দে, উত্তরবঙ্গ: উত্তরবঙ্গ (North Bengal) জুড়ে চলছে তীব্র দাবদাহ। তাপমাত্রার পারদ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, যা অনেক জেলায় ইতিমধ্যে ৩৪-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। আর্দ্রতার কারণে এই গরম আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে, ফলে জনজীবন কার্যত দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র লু-হাওয়া শুরু হচ্ছে, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। প্রখর রোদে বাইরে বেরোনো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ সামান্য স্বস্তি পেতে ঠান্ডা পানীয়ের দিকে ঝুঁকছেন। এর মধ্যে আখের রসই যেন একমাত্র প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর উপায় হিসেবে সবার পছন্দের শীর্ষে উঠে এসেছে।
শহরের অলিতে-গলিতে, রাস্তার মোড়ে, বাজার এবং জনবহুল এলাকায় আখের রসের দোকানগুলোতে ভিড় উপচে পড়ছে। এই প্রাকৃতিক পানীয় শরীরের ক্লান্তি দূর করে এবং তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়, যা এই তীব্র গরমে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আখের রস শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়, এটি সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়, যা সাধারণ মানুষের কাছে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এই গরমে আখের রস পান করলে শরীরে তাৎক্ষণিক স্বস্তি মেলে। বাজারে অন্যান্য পানীয়ের তুলনায় এটি সস্তা এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।”
তীব্র গরমে আখের রসের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে। যারা এই ব্যবসার মাধ্যমে সংসার চালান, তাদের দৈনিক আয় কয়েকগুণ বেড়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আখের রসের দোকানগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। একজন বিক্রেতা জানান, “এই গরমে আমাদের বিক্রি তিন-চার গুণ বেড়েছে। মানুষ এক গ্লাস আখের রস পান করে স্বস্তি পাচ্ছেন, আর আমাদেরও আয় বাড়ছে।” তিনি আরও বলেন, “এই সময়টা আমাদের জন্য সোনার দিন। যতদিন এই গরম চলবে, আমাদের ব্যবসাও ভালো চলবে।”
আখের রসের এই চাহিদা শুধু বিক্রেতাদের আর্থিক স্বস্তি এনেছে তাই নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আখের চাষও বেড়েছে, যা কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। তবে, কিছু বিক্রেতা জানিয়েছেন, তীব্র গরমে আখের উৎপাদনেও কিছুটা প্রভাব পড়ছে, যার ফলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
এই তীব্র দাবদাহে আখের রস শুধু জনজীবনের স্বস্তির উৎসই নয়, বরং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্যও একটি লাভজনক সুযোগ হয়ে উঠেছে। তবে, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগামী কয়েকদিন গরমের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আখের রসের চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এবং বিক্রেতা উভয়েই এই প্রাকৃতিক পানীয়কে তাদের গরমের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।