রাজ্য সরকারের অবহেলার কারণে উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়, অভিযোগ শমীকের

অয়ন দে, বাগডোগরা: গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল বর্ষণের কারণে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও ডুয়ার্স অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ইতিমধ্যেই ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।…

অয়ন দে, বাগডোগরা: গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল বর্ষণের কারণে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও ডুয়ার্স অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ইতিমধ্যেই ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড়ি এবং সমতল অঞ্চলে বন্যার জলে বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, আর মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। তেমনি, নদী পাড়ে বসবাসরত মানুষেরা আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য।

Advertisements

এই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার সকালে উত্তরবঙ্গে পৌঁছান বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য (Shamik Bhattacharya)। কলকাতা থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে তিনি সরাসরি দুর্গত এলাকা পরিদর্শনের জন্য রওনা দেন। বাগডোগরা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপে শমীক বলেন, “দক্ষিণবঙ্গের কিছু মানুষ, কিছু নেতা এবং কিছু আমলা উত্তরবঙ্গের উপর লুটপাট চালাচ্ছেন। পাহাড় ও ডুয়ার্স অঞ্চলে কত জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে সেই খোঁজ নেওয়া উচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাকৃতিকভাবেই আসে, কিন্তু বালি-পাথর মাফিয়াদের কারণে আজ এই বিপর্যয়।”

   

শমীক আরও জানান, “নদী থেকে অবৈধভাবে বালি ও পাথর উত্তোলনের ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বনাঞ্চল কেটে সাফ করে দেওয়া হয়েছে। বিগত ১৪ বছর ধরে উত্তরবঙ্গ লুট হওয়া বন্ধ হচ্ছে না। এ কারণে এই বিপর্যয় কেবল প্রাকৃতিক নয়, মানবসৃষ্টও।”

তিনি বলেন, “এই বিপর্যয়ের জন্য কাউকে দোষী করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। বিজেপির সাংসদ ও বিধায়করাও সবসময় উত্তরবঙ্গের পাশে রয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি সমস্তরকম সাহায্যের জন্য প্রস্তুত।”

বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে শমীক সরাসরি সড়কপথে নাগরাকাটা যান। সেখানে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে তিনি ধূপগুড়ি যান। দুর্গত মানুষের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরিমাপ এবং জরুরি সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও ত্রাণ কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করেন।

শমীক ভট্টাচার্য জানান, “উত্তরবঙ্গ শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার নয়, দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক অবহেলারও শিকার। আমাদের লক্ষ্য, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য পর্যায়ে পর্যাপ্ত সাহায্য পৌঁছানো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।”

পরিদর্শন শেষে শিলিগুড়িতে ফিরে তিনি বিকেলের মধ্যে কলকাতায় ফেরার কথা রয়েছে। শমীকের এই সফর উত্তরবঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি হিসেবে গণ্য হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শমিকের এই কড়া বক্তব্য রাজ্য সরকারের কার্যকারিতা এবং উত্তরবঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি অবহেলার আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

উত্তরবঙ্গের মানুষ আশা করছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য এবং রাজনৈতিক নেতাদের সক্রিয় মনোযোগের মাধ্যমে তারা দ্রুত বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।