কার্শিয়ংয়ে নেপালি ভাষায় সাইনবোর্ড বাধ্যতামূলক: জারি হল সরকারি নির্দেশিকা
শিলিগুড়ির পর এবার কার্শিয়ং! দার্জিলিং জেলার কার্শিয়ং (Kurseong) পঞ্চায়েত সমিতি একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যার মাধ্যমে এই অঞ্চলের সব এলাকায় নেপালি ভাষায় সাইনবোর্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, কার্শিয়ং পঞ্চায়েত সমিতির আওতাধীন সব দোকান, রেস্তোরাঁ, অফিস, হোটেল, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্কুল এবং হোমস্টেতে নেপালি ভাষায় সাইনবোর্ড ব্যবহার করতে হবে। অন্য ভাষায় সাইনবোর্ড থাকতে পারে, তবে স্থানীয় নেপালি ভাষায় সাইনবোর্ড থাকা বাধ্যতামূলক। এই নির্দেশিকা ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে জারি করা হয়েছে এবং এটি ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে কার্যকর হবে।
Also Read | পুরসভার কড়া নির্দেশে শিলিগুড়ি বদলে যাবে নববর্ষে
কার্শিয়ং পঞ্চায়েত সমিতির এই নির্দেশিকা স্থানীয় নেপালি সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “সর্বে স্থানীয়বাসীদের নেপালি ভাষায় সাইনবোর্ড ব্যবহার করতে হবে। এটি স্থানীয় ভাষার প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও সুবিধাজনক হবে।” এই নির্দেশিকা কার্যকর করার জন্য ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে, যাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সাইনবোর্ড পরিবর্তন করতে পারে।
কার্শিয়ংয়ে নেপালি ভাষার গুরুত্ব
কার্শিয়ং দার্জিলিং জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে নেপালি সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এই অঞ্চলের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং দৈনন্দিন জীবনে নেপালি ভাষার প্রভাব অত্যন্ত গভীর। কার্শিয়ং পঞ্চায়েত সমিতির এই পদক্ষেপ স্থানীয় ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি এটিকে আরও প্রচার ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্থানীয় নেপালি ভাষা ব্যবহার করা হলে এলাকার পরিচয় আরও স্পষ্ট হবে এবং পর্যটকদের কাছেও এটি একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠবে।
কার্শিয়ং একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক আসেন চা বাগান, পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করতে। নেপালি ভাষায় সাইনবোর্ড বাধ্যতামূলক করার ফলে পর্যটকরা স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আরও গভীরভাবে পরিচিত হতে পারবেন। একই সঙ্গে, এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য তাদের ভাষার প্রতি গর্ববোধ জাগিয়ে তুলবে।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যতামূলক?
নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কার্শিয়ং পঞ্চায়েত সমিতির আওতাধীন সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
দোকান
কার্যালয়
বিদ্যালয়
রেস্তোরাঁ
হোটেল/হোমস্টে
হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক সেন্টার
অন্যান্য বাণিজ্যিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে অন্য ভাষায়ও সাইনবোর্ড ব্যবহার করতে পারে, তবে নেপালি ভাষায় সাইনবোর্ড থাকা বাধ্যতামূলক। এটি নিশ্চিত করবে যে, স্থানীয় ভাষা তার গুরুত্ব বজায় রাখে এবং সবাই এটি ব্যবহারে উৎসাহিত হয়।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এই নির্দেশিকা নিয়ে কার্শিয়ংয়ের স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “এটি আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি দারুণ উদ্যোগ। নেপালি ভাষায় সাইনবোর্ড থাকলে আমাদের পরিচয় আরও স্পষ্ট হবে।” তবে, কিছু ব্যবসায়ী এই নিয়মের বাস্তবায়নে আর্থিক চাপের কথা উল্লেখ করেছেন। একজন হোটেল মালিক বলেন, “নতুন সাইনবোর্ড তৈরি করতে খরচ হবে। সরকারের উচিত ছিল এর জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া।”
বাঙালি সম্প্রদায়ের দৃষ্টিকোণ
কার্শিয়ং পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে বাঙালি পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই নির্দেশিকা নিয়ে আগ্রহ দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, এটি স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। একজন কলকাতার বাসিন্দা বলেন, “কার্শিয়ংয়ে গেলে নেপালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। নেপালি ভাষায় সাইনবোর্ড থাকলে স্থানীয় পরিবেশ আরও ভালোভাবে উপভোগ করা যাবে।” তবে, কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি যেন অন্য ভাষার প্রতি অবহেলার কারণ না হয়।
এই নির্দেশিকা কার্শিয়ংয়ের স্থানীয় অর্থনীতি এবং পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নেপালি ভাষার প্রচার এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করবে। তবে, এটি কার্যকর করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বাঙালি পর্যটকদের জন্য কার্শিয়ং এখন আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে, যেখানে তারা স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে পরিচিত হতে পারবেন।
কার্শিয়ং পঞ্চায়েত সমিতির এই নির্দেশিকা নেপালি ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি স্থানীয়দের গর্ববোধ জাগিয়ে তুলবে এবং পর্যটকদের জন্য এই অঞ্চলকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। আগামী দিনে এই নিয়ম কীভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং এর প্রভাব কী হয়, সেদিকে নজর থাকবে সবার।