দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (DHR)-এর ঐতিহ্যবাহী ন্যারো গেজ রুটে নতুন প্রজন্মের ইঞ্জিন যুক্ত করার লক্ষ্যে বড়সড় পদক্ষেপ নিল রেল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি, ডিএইচআর-এর জন্য বিশেষভাবে কেনা এনডিএম-৬ (NDM-6 Diesel Loco Trial) ডিজেল-হাইড্রোলিক (DSL) লোকোমোটিভের ফাইনাল ট্রায়াল রান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই ট্রায়াল রানটি দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত তিনটি কোচ সহ পরিচালিত হয়, এবং তার আগে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত আপহিল রুটেও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল পরীক্ষামূলক যাত্রা।
এই অত্যাধুনিক ইঞ্জিনটি তৈরি করা হয়েছে বিশেষভাবে ডিএইচআর-এর মতো পাহাড়ি ও সংকীর্ণ রেলপথের জন্য। এতে রয়েছে উন্নত সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য, উচ্চতর কর্মক্ষমতা এবং দীর্ঘস্থায়ী নির্ভরযোগ্যতা। রেল দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নতুন লোকো যুক্ত হলে পাহাড়ি রুটে টয়ট্রেন চলাচলে আরও গতি ও স্থায়িত্ব আসবে, এবং একই সঙ্গে যাত্রী সুরক্ষাও বৃদ্ধি পাবে।
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি প্রাপ্ত একটি রেলপথ। এই রেলপথটি ১৮৭৯ থেকে ১৮৮১ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল এবং শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত প্রায় ৮৮ কিমি দৈর্ঘ্যের এই রেলপথ আজও বহু পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঐতিহ্য বজায় রাখতে রেল বোর্ড চাইছে, ভবিষ্যতে যতটা সম্ভব স্টিম ইঞ্জিন ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। কারণ টয়ট্রেনের ইতিহাস শুরু হয়েছিল বাষ্প চালিত ইঞ্জিন দিয়েই, প্রায় ১৩৭ বছর আগে।
বর্তমানে দার্জিলিং থেকে নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) পর্যন্ত এবং দার্জিলিং থেকে ঘুম রুটে প্রতিদিন কয়েকটি টয়ট্রেন পরিষেবা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি ‘জয় রাইড’ ট্রেনের বেশিরভাগই ডিজেল ইঞ্জিনে চলে। যদিও কিছু নির্দিষ্ট ‘চার্টার্ড’ ট্রেনে এখনও স্টিম ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়, মূলত পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, “NDM-6 ডিজেল লোকোর ট্রায়াল রানটি রেল ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমরা ঐতিহ্য রক্ষা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এগিয়ে যেতে চাই। এই ইঞ্জিনের সাহায্যে পাহাড়ি রুটে আরও সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে।”
এই মুহূর্তে আরও দুটি এনডিএম-৬ ডিজেল লোকো কেনার প্রক্রিয়া চলছে এবং খুব শীঘ্রই সেগুলিও ডিএইচআর-এর পরিষেবায় যুক্ত হবে বলে জানানো হয়েছে। এমনকি নিয়মিত রুটে এই লোকো যুক্ত করার আগে একাধিকবার ট্রায়াল ও নিরাপত্তা মূল্যায়ন করা হবে।
ডিএইচআর-এর এই নতুন উন্নয়ন কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক নয়, বরং ঐতিহ্য রক্ষার মধ্যেও আধুনিকীকরণের এক নিখুঁত সংমিশ্রণ। পাহাড়ি ভ্রমণের নতুন যুগের সূচনা ঘটাতে চলেছে এই এনডিএম-৬ ডিজেল লোকো।