শিলিগুড়ি: পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া মানেই আর অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়! পর্যটকদের সুবিধার্থে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং ও গ্যাংটক রুটে মোট ২৫টি সরকারি বাস পরিষেবা চালু করেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (NBSTC) এবং সিকিম সরকার। এই উদ্যোগে পাহাড় ভ্রমণ আরও সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক হয়ে উঠেছে বলে দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্ট মহলের।
পর্যটন মরশুমে সাধারণত নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) বা শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পৌঁছানোর জন্য ছোট গাড়ি বা ট্যাক্সি ভাড়া ৩,৫০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেক পর্যটককেই তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। এবার সেই সমস্যার সমাধানেই কম খরচের সরকারি বাস পরিষেবা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং রুটে ৭টি ছোট পাহাড়ি বাস চালু করেছে, যেগুলিতে ২৫টি করে আসন রয়েছে। এই বাসগুলিতে জনপ্রতি ভাড়া মাত্র ১০৫ টাকা। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস থেকে সকাল ৬টা থেকে প্রতি ২০ মিনিট অন্তর বাস ছাড়ছে। যাত্রীরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে অটো বা টোটো ধরে সরাসরি বাস টার্মিনাসে পৌঁছে দার্জিলিংগামী সরকারি বাস ধরে নিতে পারবেন। এই যাত্রা সম্পন্ন করতে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টা।
এনবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর দীপঙ্কর পিপলাই জানিয়েছেন, বর্তমানে ৭টি বাস চালানো হচ্ছে, ভবিষ্যতে চাহিদা বাড়লে আরও বাস যুক্ত করা হবে। তাঁর বক্তব্য, “পর্যটকদের সুবিধা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।”
শুধু দার্জিলিং নয়, সিকিম সরকারও শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যাওয়ার জন্য ১৮টি সরকারি বাস চালু করেছে। সাধারণ বাসগুলির ভাড়া ২৭৫ টাকা, আর ৩টি বাতানুকূল বা এসি বাসের ভাড়া ৫০০ টাকা। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৫ ঘণ্টা। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সাধারণ বাস চলাচল করে এবং এসি বাসগুলি ছাড়ে সকাল ৮টা থেকে। এই বাসগুলিও তেনজিং নোরগে টার্মিনাসের পাশের এসএনটি (SNT) বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে।
খরচ কমাতে ও ট্যাক্সিচালকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সমস্যার সমাধানে সরকারি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পর্যটক থেকে শুরু করে ট্রাভেল এজেন্টরাও। রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু জানিয়েছেন, “প্রতি বছর ভাড়াজনিত নানা অনিয়মের অভিযোগ আসে, সরকারি বাস পরিষেবার ফলে সেই সমস্যা অনেকটাই কমবে।” একই বক্তব্য জিটিএ (GTA)-র মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মারও। তাঁর মতে, “বিকল্প সরকারি যাতায়াত ব্যবস্থা পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং বিশ্বাস দুটোই বাড়াবে।”
সিকিমের পর্যটন কর্মীদের মতে, রাজ্যে ১,৭২৫টিরও বেশি ট্রাভেল এজেন্সি, ৩০,০০০-এর বেশি ট্যাক্সি ও পর্যাপ্ত হোটেল পরিষেবা রয়েছে। সরকারি বাস পরিষেবা চালু হওয়ায় কম খরচে আরও বেশি পর্যটক সিকিমমুখী হচ্ছেন। গ্যাংটকের পর্যটন কর্মী নবীন ছেত্রীর কথায়, “সস্তা ভাড়ার সরকারি বাস পরিষেবা সাধারণ পর্যটকদের কাছে বড় সুযোগ, তাই চাহিদাও বাড়ছে।”
অনলাইনে বাসের টিকিট বুকিং করার সুবিধা থাকায় লাইনে দাঁড়ানো বা দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ার ঝুঁকিও কমবে বলে মনে করছে পর্যটন মহল। ফলে কম খরচে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্যভাবে পাহাড় ভ্রমণের ইচ্ছা পূরণ করতে পারছেন পর্যটকরা।


