সৌরভ রায়, শিলিগুড়ি: দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি (Naxalbari) থানার পুলিশ মাদক পাচারের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আরও দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন তপেশ বর্মন এবং বাপি বর্মন, যারা পূর্বের একটি মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পলাতক ছিলেন। এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে নকশালবাড়ি এলাকায় মাদক কারবারের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়েছে।
গত ১৫ মে নকশালবাড়ির টুকরিয়া মোড়ে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৭০ গ্রাম ব্রাউন সুগার এবং ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা জব্দ করেছিল। ওই ঘটনায় তিনজন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে, তপেশ বর্মন এবং বাপি বর্মন সেই সময় পলাতক ছিলেন। দীর্ঘ তদন্ত এবং নজরদারির পর অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় শান্তিনগর এলাকা থেকে এই দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের শুক্রবার শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে, এবং পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করেছে।
নকশালবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম বারি জানিয়েছেন, “মাদক কারবারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এই ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা কোনও আপস করব না।” তিনি আরও বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতা এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই ধরনের অভিযান সফল হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মাদক চক্রের অন্যান্য সদস্য এবং সরবরাহ চেইন সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
নকশালবাড়ি, দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমার একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যা হিমালয়ের পাদদেশে তরাই অঞ্চলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান এবং নেপাল সীমান্তের নৈকট্যের কারণে মাদক পাচারের জন্য এটি একটি সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাদক কারবারের কারণে এলাকার যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে নেশার প্রভাব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, পুলিশের এই অভিযান স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি এনেছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা, রমেশ সরকার, বলেন, “মাদকের কারণে আমাদের এলাকার অনেক তরুণের জীবন নষ্ট হচ্ছে। পুলিশের এই কঠোর পদক্ষেপ আমাদের জন্য আশার আলো।” তবে, কিছু স্থানীয় বাসিন্দা মনে করছেন, শুধু গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। মাদকাসক্তি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে এসেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। নকশালবাড়ির মতো সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে গাঁজা, ব্রাউন সুগার এবং হেরোইনের মতো মাদকের চোরাচালান বেশি দেখা যায়। এই অভিযানে জব্দ করা ব্রাউন সুগারের বাজারমূল্য প্রায় ৭ লক্ষ টাকা হবে বলে পুলিশের অনুমান।
এই ঘটনা নকশালবাড়ির মতো গ্রামীণ এলাকায় মাদক কারবারের বিস্তৃতি এবং এর সামাজিক প্রভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় সমাজকর্মীরা বলছেন, মাদক পাচারের মূল উৎস এবং বিতরণ নেটওয়ার্ক ভাঙতে আরও বড় পরিসরে অভিযান এবং সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। পাশাপাশি, যুব সম্প্রদায়কে নেশার হাত থেকে রক্ষা করতে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে এসেছে।
নকশালবাড়ি থানার এই সফল অভিযান এলাকায় মাদক বিরোধী লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পুলিশের তৎপরতা এবং স্থানীয়দের সহযোগিতা এই অঞ্চলে মাদক কারবারের বিরুদ্ধে জোরালো বার্তা দিচ্ছে। তবে, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সামাজিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।