মুসলিম মেয়েকে বিয়ে! কোচবিহারে মুকুলের বাড়ি ভাঙল মৌলবাদীরা

কোচবিহার (Coochbehar) জেলার হলদিবাড়িতে একটি হিন্দু-মুসলিম বিয়েকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হলদিবাড়ির বাসিন্দা মুকুল রায় নামে এক হিন্দু যুবক গত…

Coochbehar

কোচবিহার (Coochbehar) জেলার হলদিবাড়িতে একটি হিন্দু-মুসলিম বিয়েকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হলদিবাড়ির বাসিন্দা মুকুল রায় নামে এক হিন্দু যুবক গত ১৪ আগস্ট হিন্দু রীতি অনুসারে সুইটি পারভিন নামে এক মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেন। এই বিয়ের রেজিস্ট্রি ও হয়েছিল আইন মেনে।

কিন্তু এই বিয়েকে কেন্দ্র করে ১৬ আগস্ট রাতে প্রায় ১৫০ জনের একটি দল, ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুকুল রায়ের বাড়িতে হামলা চালায়। এই হামলায় মুকুলের বাবা, ভাই এবং মা মারধরের শিকার হন। বাড়ির ভাঙচুর করা হয় এবং তিনটি মোটরসাইকেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত মুকুলের বাবা ও ভাই বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় হালদিবাড়ি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

   

এই ঘটনা স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা ধর্মীয় মৌলবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। মুকুল রায় ও সুইটি পারভিনের বিয়ে হিন্দু রীতি অনুসারে সম্পন্ন হওয়ায় এবং এটি আইনি ভাবে বৈধ হওয়ায় এই হামলার ঘটনা ধর্মীয় সহনশীলতা ও সামাজিক সম্প্রীতির প্রশ্ন তুলেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা এলাকায় অশান্তি ও বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, যা কোচবিহারের মতো একটি বহুসাংস্কৃতিক অঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর।হালদিবাড়ি থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হামলাকারীরা সংঘবদ্ধভাবে মুকুলের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং পরিকল্পিতভাবে সম্পত্তি ধ্বংস করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে, এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে।এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

কোচবিহার জেলা ঐতিহাসিকভাবে একটি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির কেন্দ্র। এখানে হিন্দু, মুসলিম, রাজবংশীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করে। এই অঞ্চলের ইতিহাসে কোচ রাজবংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যারা এই এলাকায় দীর্ঘদিন শাসন করেছে। তবে, সাম্প্রতিক এই ঘটনা এলাকার সামাজিক সম্প্রীতির উপর প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

Advertisements

স্থানীয় নেতা ও সমাজকর্মীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তারা বলছেন, ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মীয় পছন্দ বা বিয়ের মতো সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। একজন স্থানীয় সমাজকর্মী বলেন, “এই ধরনের হামলা শুধু একটি পরিবারের উপর নয়, সমগ্র সমাজের শান্তি ও সৌহার্দ্যের উপর আঘাত।

তবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করা হয়নি।এই ঘটনা কোচবিহারের সামাজিক ও ধর্মীয় গতিশীলতার উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের ইতিহাসে এই অঞ্চল সবসময়ই সৌহার্দ্যের উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

তবে, এই হামলার ঘটনা সেই ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ করছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এখন প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় এবং সামাজিক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা যায়।

Samsung Galaxy S25 Ultra-র বিক্রিতে রেকর্ড, পিছনে পড়ে রইল ভিভো-ওপ্পো-শাওমি

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা এবং তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সবার দৃষ্টি রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা চান, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। একইসঙ্গে, এই ঘটনা যেন ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি না করে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।