স্নেহা ঘোষ, জলপাইগুড়ি: বুধবার গভীর রাতে জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট (Banarhat) ব্লকের মধ্য শালবাড়ি এলাকার বেরুবাগ নদীতে একটি বিশাল আকৃতির পাইথনের উপস্থিতি দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা মিলে প্রায় ১২ ফুট লম্বা এই রক পাইথনটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিক স্কুলের মাঠে বেঁধে রাখে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার বাসিন্দারা ভিড় জমান। পরবর্তীতে মরারঘাট রেঞ্জের খট্টিমারি বিটের বনকর্মীদের খবর দেওয়া হয়। বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাইথনটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাইথনটিকে পর্যবেক্ষণের পর মরারঘাট রেঞ্জের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এর আগেও মধ্য শালবাড়ি এলাকায় একাধিকবার পাইথন দেখা গেছে। এই সাপগুলো গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি এবং অন্যান্য ছোট প্রাণী শিকার করছে, যার ফলে গ্রামবাসীদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছে। তাঁদের আশঙ্কা, গ্রামের পাশেই অবস্থিত খট্টিমারি জঙ্গল থেকে খাদ্যের সন্ধানে এই পাইথনগুলো লোকালয়ে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে নদী ও জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে।
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই পাইথনগুলো আমাদের গবাদি পশু ও মুরগির জন্য হুমকি। রাতে বাচ্চাদের বাইরে বেরোতে ভয় লাগে। বন দপ্তরের উচিত জঙ্গলের সীমানায় নজরদারি বাড়ানো।” আরেকজন বাসিন্দা জানান, “বেরুবাগ নদীর ধারে প্রায়ই সাপ দেখা যায়। বর্ষায় জল বাড়লে এই সাপগুলো গ্রামে ঢুকে পড়ে।”
মরারঘাট রেঞ্জের এক বনকর্মী জানিয়েছেন, “রক পাইথন সাধারণত মানুষের উপর আক্রমণ করে না, তবে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসতে পারে। বর্ষাকালে জঙ্গলের প্রাণীরা নদী ও গ্রামের কাছাকাছি চলে আসে। আমরা পাইথনটিকে নিরাপদে জঙ্গলে ছেড়ে দেব।” তিনি আরও বলেন, “গ্রামবাসীদের সচেতন থাকতে হবে। অজান্তে সাপের কাছে গেলে বিপদ হতে পারে।”
বন দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে রক পাইথনের উপস্থিতি স্বাভাবিক। তবে, বর্ষাকালে এই সাপগুলো বেশি সক্রিয় হয়। ডুয়ার্স ও তরাইয়ের চা বাগান এলাকায়ও প্রায়ই এই প্রজাতির পাইথন উদ্ধার করা হয়। বন দপ্তর গ্রামবাসীদের জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা বন দপ্তরের কাছে জঙ্গলের সীমানায় নিয়মিত টহল এবং সচেতনতা কর্মসূচি চালানোর দাবি জানিয়েছেন। পাইথনের আক্রমণে গবাদি পশু হারানোর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও দাবি করা হচ্ছে। এই ঘটনা বানারহাটের বাসিন্দাদের মধ্যে শুধু আতঙ্কই নয়, জঙ্গল ও লোকালয়ের সহাবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বন দপ্তরের তৎপরতায় এলাকায় শান্তি বজায় রয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আরও পদক্ষেপ প্রয়োজন।