মেখলিগঞ্জ: বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় ও পালিয়ে তাকে বিয়ে করায়, প্রতিশোধ হিসেবে এক বন্ধুর বিরুদ্ধে অন্য বন্ধুকে খুনের (Mekhliganj murder) অভিযোগ উঠেছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অভিযুক্ত আত্মগোপনে ছিল। মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়া থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে এই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে। অভিযুক্তের নাম বিনয় বর্মন। শুক্রবার রাতে কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিমেষ রায় জানান, মেখলিগঞ্জ থানায় মৃত অশ্বিনী বর্মনের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বিনয়ের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অভিযুক্ত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পালিয়ে ছিল, কিন্তু তদন্তে তাকে শনাক্ত করে অবশেষে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
এই ঘটনার সূত্রপাত মেখলিগঞ্জ থানার খুনকিরঝাড় গ্রামে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে অশ্বিনী বর্মনের বাড়ির ঘর থেকে তার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অশ্বিনীকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় এটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। ঘটনার রাতেই অশ্বিনীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা, যাদের দাবি অনুযায়ী বিনয়ের দিকেই অভিযোগের আঙুল ওঠে।
অশ্বিনীর মা মিনা বর্মন জানিয়েছেন, তার ছেলে ও বিনয় একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তাদের পরিচয় হয়েছিল হায়দ্রাবাদে, যেখানে তারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে বিনয়ের স্ত্রীও তাদের সঙ্গেই থাকতেন। কিন্তু একসময় অশ্বিনী ও বিনয়ের স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা শেষ পর্যন্ত বিবাহ পর্যন্ত গড়ায়। এক বছর আগে হায়দ্রাবাদে কাজের জায়গা থেকে পালিয়ে বিনয়ের স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ে করেন অশ্বিনী।
এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই দুই বন্ধুর মধ্যে সম্পর্কের ফাটল সৃষ্টি হয়। তীব্র বিরোধ শুরু হলেও অশ্বিনী মেখলিগঞ্জে ফিরে এসে তার সঙ্গে সংসার শুরু করেন। এই ঘটনা বিনয়ের মনে ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপের দিকে মোড় নেয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার দিন বিনয় হঠাৎ করে রাতে অশ্বিনীর বাড়িতে ঢুকে তাকে খুন করে পালিয়ে যায়।
মিনা বর্মন পুলিশকে জানান, তিনি তার ছেলের খুনের জন্য অভিযুক্ত বিনয় বর্মনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করেন। পুলিশও ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্তের সঙ্গে ঘটনায় অন্য কারোর কোনো ভূমিকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিমেষ রায় বলেন, “আমরা বিনয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো ঘটনা জানার চেষ্টা করছি। সেদিনের ঘটনার সবকিছু বের করে আনতে তদন্তে গুরুত্ব সহকারে কাজ চলছে।”
এই ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই খুনের ঘটনায় মর্মাহত হলেও কেউ কেউ বলছেন, বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসের এভাবে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য বিনয়ের রাগ ছিল অশ্বিনীর বিরুদ্ধে। তবে খুনের মতো অপরাধ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং এর জন্য অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে অশ্বিনীর পরিবার।
ঘটনার পিছনে থাকা সন্দেহ এবং তদন্ত
পুলিশ জানিয়েছে, অশ্বিনী এবং বিনয়ের স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে আগেই জানতেন তারা। তবে কিভাবে বিনয়ের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটে এবং কিভাবে পরিকল্পনা মাফিক খুনটি ঘটানো হয়েছিল, সেটিও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী, খুনের দিন বিনয়কে সন্ধ্যার সময় তার নিজের বাড়ির দিকে যেতে দেখা গিয়েছিল, তবে সে কোনো ধরনের সন্দেহের পরিবেশ তৈরি না করেই পরিকল্পনা মাফিক ঘটনাটি ঘটায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিনয় দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় তার সন্ধান চালানো হচ্ছিল। বীরপাড়া থানার এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালিয়ে অবশেষে তাকে আটক করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে পুলিশ মনে করছে, এই খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে এবং ঘটনাস্থলে সেদিন উপস্থিত থেকেও সহায়তা করেছে কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে।
বিচার প্রক্রিয়ায় পুলিশের পদক্ষেপ
বিনয় বর্মনকে শনিবার আদালতে পেশ করা হবে বলে জানা গেছে। পুলিশের তরফ থেকে রিমান্ড চাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যাতে ঘটনার সমস্ত সত্য প্রকাশ করা যায় এবং অশ্বিনীর পরিবার ন্যায়বিচার পেতে পারে।