আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার বাসিন্দা অঞ্জলি শীলকে অসম সরকারের বিদেশি ট্রাইব্যুনাল থেকে জাতীয় নাগরিক তালিকা নোটিশ (NRC Notice) পাঠানোর ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা ভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগে কোচবিহারের উত্তমকুমার ব্রজবাসী এই ধরনের নোটিশ পেয়েছিলেন, এবার অঞ্জলি শীলের নামে নোটিশ জারির খবরে রাজ্যের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মমতা এই ঘটনাকে ‘বাঙালি অস্মিতার উপর আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “অসম সরকার বাংলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে, যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের উপর এই আক্রমণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।” তবে অঞ্জলি শীল জানিয়েছেন, তিনি এখনও কোনো নোটিশ হাতে পাননি। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপারও এমন কোনো নোটিশের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন।
মমতা আরও অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি বাংলার প্রান্তিক সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে তাদের ভীতি প্রদর্শন ও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “এটি গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ। বিজেপি বাংলার মানুষের পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করব।” তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “নিজের রাজ্য সামলাতে পারেন না, অথচ বাংলার বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন। এটা বন্ধ না হলে আমরা প্রতিবাদে রাস্তায় নামব।” মমতা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুষ্মিতা দেবকে অসমে বড় আকারের প্রতিবাদের আয়োজন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ঘটনা বাংলার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি বাঙালিদের বিরুদ্ধে ‘ভাষাগত সন্ত্রাস’ চালাচ্ছে। তারা অভিযোগ করেছে যে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি পরিচয়ের মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে এবং ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি ও ভাষার উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। ২০২৬-এর নির্বাচনে আমরা তাদের রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করব।”
অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা দাবি করেছে যে তৃণমূল এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। বিজেপি নেতা সুশীল বর্মন বলেন, “এটি তৃণমূলের মিথ্যা প্রচার। বাংলার সরকারের উচিত নিজেদের দায়িত্ব পালন করা।” তবে তৃণমূলের দাবি, অঞ্জলি শীলের নামে নোটিশ পাঠানোর ঘটনা বাঙালি-বিরোধী মনোভাবের প্রমাণ। তারা ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে।
এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। ফালাকাটার বাসিন্দারা বলছেন, “আমরা ভারতীয় নাগরিক, আমাদের বাঙালি পরিচয়ের জন্য হয়রানি করা হচ্ছে।” তৃণমূল এই ইস্যুতে জনমত গঠনের চেষ্টা করছে এবং আগামী দিনে আরও বড় প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে।