তিস্তার গর্ভে জাতীয় সড়ক, ধসের জেরে বিচ্ছিন্ন সংযোগ! বন্ধ সড়ক

শিলিগুড়ি: টানা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ ধস (Landslides) নামল উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায়। রবিবার রাতে জাতীয় সড়ক ১০-এর একটি বড় অংশ তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।…

তিস্তার গর্ভে জাতীয় সড়ক, ধসের জেরে বিচ্ছিন্ন সংযোগ! বন্ধ সড়ক

শিলিগুড়ি: টানা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ ধস (Landslides) নামল উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায়। রবিবার রাতে জাতীয় সড়ক ১০-এর একটি বড় অংশ তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই ঘটনায় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শিলিগুড়ি এবং সিকিমের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ। এনএইচআইডিসিএল (NHIDCL) তরফে জানানো হয়েছে, আগামী বুধবার সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত মূল রাস্তা বন্ধ থাকবে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বিকল্প রুটে ছোটো গাড়ি চললেও, ভারী যানবাহনের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ঘটনাস্থল সেতিঝোড়া এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে মাটি আলগা হয়ে যায়। তার জেরেই জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গায় ধস নামে। বিশেষ করে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের এমন গুরুত্বপূর্ণ অংশ তিস্তার ভেতরে তলিয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পর্যটন ও পণ্য পরিবহণ। ওই সময় রাস্তায় থাকা বেশ কিছু যানবাহন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায়, যদিও ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয় এবং বহু পর্যটক ও গাড়ি মাঝপথে আটকে পড়ে।

   

দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসন। বিপজ্জনক অঞ্চলগুলি ঘিরে দেওয়া হয়েছে এবং যাত্রীদের বিকল্প রুটে যাতায়াতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে তিনটি বিকল্প রুটে ছোট গাড়ি চলাচল করছে, তা হল:

শিলিগুড়ি-জোরবাংলো-তিস্তাবাজার-রংপো-গ্যাংটক

শিলিগুড়ি-সেবক-ডামডিম-গরুবাথান-লাভা-আলগাড়া-কালিম্পং-মঙসঙ-রংপো-গ্যাংটক

শিলিগুড়ি-সেবক-বাগরাকোট-লাভা-আলগাড়া-মঙসঙ-রংপো-গ্যাংটক (NH 717A)

তবে এসব রুট পাহাড়ি এবং অপেক্ষাকৃত সরু হওয়ায়, বড় ট্রাক বা ট্যাঙ্কার জাতীয় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে।

Advertisements

একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “এখনোও তিস্তার জলস্তর বিপদসীমার কাছাকাছি। সেতিঝোড়ার ধসটা এমন সময়ে ঘটল, যখন রাস্তার ওপর অনেক গাড়ি ছিল। ওটা যদি দিনকালে হতো, প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।”

এনএইচএআই-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই ধসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। দ্রুত রাস্তা পুনর্গঠন এবং যোগাযোগ চালু করার জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে।”

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ত্রাণ শিবির ও বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং বিশেষ করে সিকিম যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে আপাতত তা স্থগিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্ষার সময় উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় ধস নতুন নয়। কিন্তু এবারের ধসের ব্যাপ্তি এবং তিস্তার প্রবাহ এতটাই ভয়ঙ্কর যে পরিস্থিতিকে প্রশাসন ‘গুরুতর বিপর্যয়’ হিসেবেই বিবেচনা করছে।

এই মুহূর্তে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটন শিল্পের উপর বড়সড় প্রভাব পড়তে চলেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পণ্যবাহী যান চলাচল, যার জেরে সিকিম ও কালিম্পং অঞ্চলে খাদ্যদ্রব্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগানও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পরিস্থিতির উপর জেলা প্রশাসন, এনএইচএআই ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী নজর রাখছে। মূল সড়ক কত দ্রুত পুনর্গঠন করা যাবে, তা এখন নির্ভর করছে আবহাওয়ার উপর। আপাতত আগামী ২-৩ দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।