কোহিনুর চা বাগানে তালাবন্ধ বিক্ষোভ, শ্রমিকদের দাবি—‘মালিক নেই, বকেয়া মিটুক’

অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) কোহিনুর চা বাগানে মঙ্গলবার সকাল থেকেই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। দিনের শুরুতেই শ্রমিকরা চা বাগানের ম্যানেজারের ঘরের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষোভ উগরে…

কোহিনুর চা বাগানে তালাবন্ধ বিক্ষোভ, শ্রমিকদের দাবি—‘মালিক নেই, বকেয়া মিটুক’

অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) কোহিনুর চা বাগানে মঙ্গলবার সকাল থেকেই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। দিনের শুরুতেই শ্রমিকরা চা বাগানের ম্যানেজারের ঘরের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। এরপর এক প্রকার প্রতিবাদ স্বরূপ তাঁরা বাগানের কাজে যোগ না দিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান। ফলে সেদিন একটিও পাতা তোলা হয়নি বাগানে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোহিনুর চা বাগানের কার্যত কোনও স্থায়ী মালিক নেই বহুদিন ধরে। এই সুযোগে কেউ কেউ পাতা তুলে বাজারে বিক্রি করছেন এবং নিজেদের মালিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি, এদের মধ্যে কেউই আসল মালিক নন। তাঁরা চান প্রকৃত মালিক বা সরকারি উদ্যোগে বাগান পুনরায় সঠিকভাবে চালু হোক।

   

শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, গত কয়েক মাস ধরে তাদের বকেয়া মজুরি মেটানো হয়নি। শুধু তাই নয়, অনেক শ্রমিককে জোরপূর্বক অবসর নিতে বাধ্য করা হচ্ছে, অথচ তাঁদের পাওনা বা সুবিধা যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে, কারণ বাগানটি অলিখিতভাবে বন্ধ হওয়ার পথে।

সোমবার রাত আটটা নাগাদ পরিস্থিতি চরমে ওঠে। ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাগানের অফিসের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের অভিযোগ, বাগান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনও সঠিক আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে না, বরং সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।

শ্রমিক নেতারা জানান, ‘‘আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি, কিন্তু কোনও স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়নি। মালিক ছাড়া বাগান চলতে পারে না। আর আমরা বিনা বেতনে অনিশ্চয়তার মধ্যে বাঁচতে রাজি নই।’’

Advertisements

স্থানীয় প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং শ্রমিকদের পাওনা মেটানো ও বাগান সচল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে শ্রমিকরা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত লিখিতভাবে নিশ্চয়তা না দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা কাজে ফিরবেন না।

কোহিনুর চা বাগান একসময় আলিপুরদুয়ার জেলার অন্যতম উৎপাদনশীল বাগান ছিল। এখানে শতাধিক পরিবার চা বাগানের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত কয়েক বছরে চা শিল্পের মন্দা, বকেয়া বেতন, এবং মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে।

চা বাগান বন্ধ হয়ে গেলে শুধু শ্রমিক নয়, তাঁদের পরিবারের জীবিকা বিপন্ন হবে। শিক্ষার সুযোগ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিষেবা—সবই থমকে যাবে। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত সমাধানের দাবি তুলেছেন।

কোহিনুর চা বাগানের শ্রমিকদের এই তালাবদ্ধ আন্দোলন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তাঁরা আর নীরবে অন্যায় মেনে নেবেন না। সময়মতো বেতন, সঠিক মালিকানা ও স্থায়ী কর্মসংস্থান—এই তিনটি দাবিই এখন তাঁদের আন্দোলনের মূল ভিত্তি।