শিলিগুড়ি: দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে চলা উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের অবসান ঘটল শুক্রবার। শিলিগুড়ি (Siliguri) ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এসআইটি)-এর সুকনা-শালবাড়ি ক্যাম্পাসের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হল বহুল প্রতীক্ষিত “নলেজ নকআউট সিজন-২” আন্তঃবিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনাল।
টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ এবং এসআইটি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই বিশাল কুইজ প্রতিযোগিতা গত কয়েক মাস ধরে উত্তরবঙ্গের শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি, সৃজনশীল চিন্তাশক্তি ও দলগত মানসিকতা গড়ে তোলা, সেই সঙ্গে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ানোই ছিল এর মূল লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানের জয়েন্ট কনভেনর ডঃ অরুপ দাস, পারমিতা চৌধুরী, সুপ্রতীম সরকার ও রত্নাঙ্কুর মজুমদার জানান, “প্রথম ধাপের লিখিত বাছাই পর্ব উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলায় অনুষ্ঠিত হয়। কঠিন প্রতিযোগিতা শেষে বাছাই করা বিদ্যালয়গুলির পড়ুয়ারা ফাইনালে জায়গা করে নেয়। এবারের আসরে উত্তরবঙ্গের ২১টি শহরের ৪০টিরও বেশি বিদ্যালয় থেকে ২,৬০০-রও বেশি শিক্ষার্থী নাম নথিভুক্ত করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিশেষ দিক হল, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাশাপাশি নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরাও প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে।”
শুক্রবার সকাল থেকেই এসআইটি’র সেমিনার হলে ছিল উৎসবের আবহ। প্রতিযোগী, শিক্ষক, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা হল। কুইজ মাস্টার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কুইজ সংস্থা “কুইজ ক্যাটালিস্ট”-এর প্রতিষ্ঠাতা সূর্য নারায়ণন। তাঁর তীক্ষ্ণ প্রশ্ন, প্রাণবন্ত সঞ্চালনা ও বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনা দর্শক ও প্রতিযোগীদের সমানভাবে মুগ্ধ করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের অধ্যাপিকা ডঃ মৌশ্রী বশিষ্ট, যিনি সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টিহীন, তবুও শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উপস্থিত ছিলেন উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম প্যারাসাইকেলিস্ট ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোলো-রাইডার শ্রী রাকেশ বণিক, টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাস্কর রায়, কলেজ অফ প্রোফেশনাল স্টাডিজের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ডঃ অরুন্ধতী চক্রবর্তী, কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ডঃ জয়দীপ দত্ত এবং এসআইটি কলেজের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা।
ডঃ অরুন্ধতী চক্রবর্তী জানান, “৭টি কোয়ালিফায়ার রাউন্ড ও একটি ওয়াইল্ড কার্ড রাউন্ড শেষে মোট ১৬ জন সেমিফাইনালিস্ট বাছাই হয়। সেখান থেকে ৮ জন ফাইনালে পৌঁছে যায়। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার শেষে বিজয়ী নির্বাচিত হয়।”
প্রথম স্থান: দেবাদিত্য সরকার (বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ, কোচবিহার)
দ্বিতীয় স্থান: আহেল অনুরাগ (টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল, আলিপুরদুয়ার)
তৃতীয় স্থান: দেবর্ষী ঘটক (নেতাজি হাই স্কুল, শিলিগুড়ি)
বিজয়ীরা যথাক্রমে ₹৪০,০০০, ₹৩০,০০০ ও ₹২০,০০০ নগদ পুরস্কার, ট্রফি এবং শংসাপত্র পান। এছাড়াও দর্শকদের মধ্য থেকে সঠিক উত্তরদাতাদের বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ডঃ জয়দীপ দত্ত বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি কুইজ প্রতিযোগিতা নয়, বরং উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা, মানসিক দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য এক বিরল মঞ্চ। আগামীতে আমরা আরও বড় আকারে এই আয়োজন করতে চাই, যাতে আরও বেশি সংখ্যক বিদ্যালয় এতে যুক্ত হতে পারে।”
এভাবে “নলেজ নকআউট সিজন-২” উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের কাছে শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং জ্ঞান, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের এক অনন্য উৎসব হয়ে উঠল।