‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন চাকরি হারা শিক্ষকদের

অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: “ন্যায়বিচার দিন, নয়তো স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিন”—এই হৃদয়বিদারক আবেদন নিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দ্বারস্থ হলেন রাজ্যের চাকরি হারা শিক্ষক ও শিক্ষিকারা (Jobless…

Jobless Teachers in Alipurduar Seek Justice or Euthanasia from President

অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: “ন্যায়বিচার দিন, নয়তো স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিন”—এই হৃদয়বিদারক আবেদন নিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দ্বারস্থ হলেন রাজ্যের চাকরি হারা শিক্ষক ও শিক্ষিকারা (Jobless Teachers)। রাজ্যের প্রতিটি প্রান্ত থেকে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে ডাকপথে পাঠানো হয়েছে এই আবেদনপত্র, আর সেই তালিকায় রয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা-ও।

আবেদনপত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, আদালতের রায় অনুযায়ী বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন। অথচ সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়নি, কিংবা ভবিষ্যতের কোনও দিশাও দেখায়নি। এর ফলে তাঁরা শুধুমাত্র আর্থিকভাবে বিপর্যস্তই নন, মানসিক ও সামাজিক দিক থেকেও চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়েছেন।

   

চাকরি হারা এক শিক্ষিকা বলেন, “আমরা কষ্ট করে, পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছিলাম। যদি নিয়োগে কোনও ত্রুটি থেকে থাকে, সেটার দায় আমাদের নয়। অথচ শাস্তি পাচ্ছি আমরা। আমাদের ঘরে এখন চাল নেই, সন্তানের স্কুল ফিস দিতে পারছি না। এই অবস্থায় কি করে বাঁচবো?”

আন্দোলনকারীদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা রাজ্য প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও কোনও সদুত্তর পাননি। তাই শেষ আশ্রয় হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছেন তাঁরা। আবেদনপত্রে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, “আমরা আর চাই না শুধু আশ্বাস। চাই স্থায়ী সমাধান। রাষ্ট্রপতি মহাশয়া যেন এই বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করেন। না হলে, আমাদের জীবনে মৃত্যুই শ্রেয়।”

Advertisements

শিক্ষকদের দাবি, তাঁরা ন্যায়বিচার চাইছেন, ভিক্ষা নয়। কারোর জীবিকা হরণ করে সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা নিতে পারে না। এক শিক্ষক বলেন, “দ্রৌপদী মুর্মু দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি। তিনি জানেন, বঞ্চনার যন্ত্রণা কেমন। তাই আমাদের এই কষ্ট তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন।”

চাকরি হারানো এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা বর্তমানে কর্মহীন, আয়শূন্য জীবনের মুখোমুখি। তাঁদের অনেকেই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা, যাঁদের উপর নির্ভর করে পরিবার চলে। ফলে তাঁদের চাকরি হারানো মানে গোটা পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়া।

এই আন্দোলন এখন শুধু রাজ্যের নয়, জাতীয় স্তরে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে। শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। এখন দেখার, রাষ্ট্রপতি মুর্মু এই আবেদনপত্রের প্রতিক্রিয়ায় কী সিদ্ধান্ত নেন এবং রাজ্য সরকার আদৌ এই সংকট নিরসনের কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করে কিনা।
সাংবিধানিক প্রশ্নে পরিণত এই লড়াইয়ে প্রহর গুনছে অসংখ্য পরিবার।