জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ির মাল ব্লকে ফের এক করুণ ঘটনা। বাড়ির উঠোন থেকে উদ্ধার হল এক মহিলা বুথ লেভেল অফিসারের (BLO suicide) ঝুলন্ত দেহ। নিহতের নাম শান্তিমনি এক্কা। পরিবারের সদস্যরা প্রথমে দেহটি দেখতে পান। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে পরিবারের দাবি নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত কাজের চাপই তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
শান্তিমনি মূলত একজন আঙনওয়াড়ি কর্মী। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল SIR (Special Intensive Revision) এর বিশাল দায়িত্ব। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ, সংশোধনের ফর্ম পূরণ করানো, সারাদিন মাঠে কাজ এসবের চাপ নাকি বহন করতে পারছিলেন না তিনি। পরিবার জানিয়েছে, প্রতিদিন মানসিক চাপ ও ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ছিলেন শান্তিমনি।
বুধবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মাল থানার পুলিশ বলছে, আত্মহত্যার কারণ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে পরিবারের অভিযোগ অতিরিক্ত কাজের বোঝাকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকায় ছড়িয়েছে শোক এবং ক্ষোভ।
এই ঘটনার ছায়া পড়েছে রাজ্যের SIR পর্যালোচনা সফরের মাঝেই। উপ নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী রাজ্যে এসে কলকাতা উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে SIR অগ্রগতি খতিয়ে দেখছেন। ঠিক এই সময়েই এক বিএলও-র মৃত্যু প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এর আগে সোমবার রাজ্যের হাজার হাজার বিএলও বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ মাঠপর্যায়ের অসংখ্য কাজ, সামান্য জনবল, এবং মাত্র দুই মাসের মধ্যে বিপুল ডেটা হালনাগাদ করার নির্দেশ তাঁদের শারীরিক মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে। অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন, এই চাপ “অসম্ভব ও অমানবিক”।
নিহতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আবার এক বিএলও নিজের জীবন হারাল। এই SIR-এর অযৌক্তিক চাপই তাঁকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে। SIR শুরু হওয়ার পর থেকে ২৮ জন মারা গেছেন। এত প্রাণহানির পরও নির্বাচন কমিশন চোখ বুজে আছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যে কাজ তিন বছরে হত, তাকে দুই মাসে শেষ করার নির্দেশ রাজনৈতিক স্বার্থ ছাড়া কিছু নয়। এই অমানবিক অভিযান বন্ধ করা উচিত এখনই।”
তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে সরকারি রিপোর্ট পাওয়ার পরই মন্তব্য করা হবে। এদিকে সরকারি কর্মী সংগঠনগুলি বলছে, মাঠপর্যায়ে কাজ করা হাজার হাজার লোককে প্রতিদিন অস্বাভাবিক চাপ সহ্য করতে হচ্ছে।


