জলপাইগুড়ি: জলদাপাড়া (Jaldapara) জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণী বিভাগ এক নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করেছে। ১৩ দিনের ধৈর্যশীল ও পরিকল্পিত প্রচেষ্টার পর বন্যার জলে ভেসে যাওয়া ১০টি গণ্ডারকে উদ্ধার করে আবার জাতীয় উদ্যানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই অভিযানের নাম রাখা হয় ‘অপারেশন রাইনো’। জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী বিভাগ, কোচবিহার বনবিভাগ এবং আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলা প্রশাসনের সমন্বিত পরিশ্রমের কারণে এই অভিযান সফল হয়েছে।
গত ৫ অক্টোবর জলপাইগুড়ির ভয়াবহ বন্যার ফলে তোর্ষা নদীর জলে জলদাপাড়ার কিছু গণ্ডার স্থানীয় এলাকায় চলে আসে। এই সময়ে ১০টি গণ্ডার আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণ করতে থাকে। এরপরেই জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী বিভাগ বিশেষ অভিযানে নামে। অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল গণ্ডারদের নিরাপদে তাদের প্রাকৃতিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনা।
অভিযানে গণ্ডারদের উদ্ধার করতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু গণ্ডারকে ঘুমপাড়ানি গুলি ব্যবহার করে শান্ত করা হয়েছে এবং ট্রাক্টরের মাধ্যমে জাতীয় উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছু গণ্ডারকে কুনকি হাতি দিয়ে ড্রাইভ করিয়ে নিরাপদে আনা হয়েছে। প্রত্যেকটি গণ্ডারের জন্য পর্যাপ্ত জল সরবরাহ এবং পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল, যাতে তাদের স্বাভাবিক আচরণ বজায় থাকে।
অভিযানের ধাপগুলো ছিল খুবই নির্ধারিত। ৫ অক্টোবর স্থানীয় এলাকায় আসা দুইটি গণ্ডারকে প্রথমে জাতীয় উদ্যানে ফিরিয়ে আনা হয়। ৬ অক্টোবর তিনটি গণ্ডার, ১০ অক্টোবর পুণ্ডিবাড়ি থেকে একটি, ১৩ অক্টোবর পাতলাখাওয়া এলাকা থেকে দুটি, ১৪ অক্টোবর কোচবিহারের পুঁটিমারি কলাবাগান থেকে একটি এবং ১৭ অক্টোবর শেষ একটি গণ্ডার উদ্ধার করা হয়।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বিভাগীয় বনাধিকারিক প্রবীন কাশোয়ান জানান, “বন্যার জলে আমাদের ১০টি গণ্ডার উদ্যানের বাইরে চলে যায়। ‘অপারেশন রাইনো’-র মাধ্যমে আমরা একে একে সব গণ্ডারকে নিরাপদে তাদের প্রাকৃতিক আশ্রয়ে ফিরিয়ে এনেছি। ঘুমপাড়ানি গুলি, কুনকি হাতি এবং আর্থ মুভারের সাহায্যে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করিয়ে আমরা গণ্ডারদের জাতীয় উদ্যানে ফিরিয়ে এনেছি। এটি আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়।”
এই অভিযানের সফলতা শুধুমাত্র গণ্ডারদের জীবন রক্ষা করেনি, বরং প্রাকৃতিক পরিবেশে তাদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করেছে। জেলা পুলিশ, বনকর্মী এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা এই সাফল্যের অন্যতম মূল চাবিকাঠি। অপারেশন রাইনো জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে থাকবে।