শিলিগুড়ি: চিকেনস নেক বা শিলিগুড়ি করিডোরে বাড়ছে উত্তেজনা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস গ্রেটার বাংলাদেশের মানচিত্রে চিকেনস নেক সহ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শুধু তাই নয় এই মানচিত্র পৌঁছেছে এবং তুরস্ক সরকারের হাতে। তাই এই শিলিগুড়ি করিডোরে সুরক্ষা বাড়াতে নয়া পদক্ষেপ নিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তে তিনটি নতুন অপারেশনাল গ্যারিসন স্থাপন করেছে: বামুনি, চোপড়া ও কিষাণগঞ্জে।
এই পদক্ষেপটি ক্রস-বর্ডার নিরাপত্তার প্রতি ভারতের দৃঢ় অবস্থানের স্পষ্ট সংকেত। সীমান্তের এই নতুন শক্তিবৃদ্ধি শুধুমাত্র সামরিক কৌশল নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া। পূর্ব ভারতের সংবেদনশীল ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডরকে সুরক্ষিত করতে এই গ্যারিসনগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই করিডরটি মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া একটি সরু জমির ফালি, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে।
‘পদ্ম’ থেকে মুখ ফেরালে ‘জঙ্গল’ ফিরবে! হুঁশিয়ারি শাহের
যদি এখানে কোনো হুমকি দেখা দেয়, তাহলে পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর আলোকে এই উদ্যোগটি ভারতের সতর্কতার প্রমাণ।সবচেয়ে আগে বুঝে নেওয়া যাক, এই তিনটি গ্যারিসন কোথায় এবং কেন। প্রথমটি বামুনি, যা অসমের ধুবড়ি জেলার কাছে অবস্থিত। এখানে লাচিত বর্পুখন মিলিটারি স্টেশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে, যা অসমের প্রথম বড় সামরিক ঘাঁটি বাংলাদেশ সীমান্তের এত কাছে।
লাচিত বর্পুখন ছিলেন আহম যোদ্ধা, যিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন—এই নামটি নির্বাচন করা স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। দ্বিতীয়টি চোপড়া, উত্তর দিনাজপুরে। এখানে ভ্রমাস্ত্র কর্পসের সৈন্যরা দ্রুতগতিতে ঘাঁটি স্থাপন করেছে। তৃতীয়টি কিষাণগঞ্জ , যা বিহারের সীমান্তবর্তী এলাকায় এবং শিলিগুড়ির খুব কাছে।
এই তিনটি স্থানেই গ্যারিসনগুলি এখন সম্পূর্ণ অপারেশনাল, অর্থাৎ যেকোনো সময় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত। পূর্ব কমান্ডের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর.সি. তিওয়ারি সম্প্রতি এই স্থানগুলি পরিদর্শন করে অপারেশনাল প্রস্তুতি এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় বিজেপি এমএলএ হামিদুল রহমানসহ সিভিল কর্মকর্তারাও ছিলেন, যা সামরিক-সিভিল সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে।এই উদ্যোগের পটভূমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আঞ্চলিক জোটের পরিবর্তন।
গত আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এরপর থেকে ঢাকার নীতিমালা পরিবর্তিত হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে সম্প্রতি ইউনুস পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন, যেখানে যোগাযোগ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
চীনের সঙ্গে বিনিয়োগের প্রস্তাবও এগোচ্ছে। এই পরিবর্তন ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ, বিশেষ করে লালমোনিরহাটে বাংলাদেশের বিমানঘাঁটির আপগ্রেডিংয়ের খবর শুনে। এই ঘাঁটিটি চিকেনস নেক থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে, এবং সেখানে যুদ্ধবিমানের জন্য নতুন হ্যাঙ্গার নির্মাণ হচ্ছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশি সেনা অফিসাররা সীমান্তে ঘনঘন ঘুরছেন, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছে।


