অয়ন দে, কোচবিহার: রাজ্যজুড়ে SIR প্রক্রিয়া ঘিরে যখন সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত, ঠিক তখনই কোচবিহারের জিতপুরে ঘটল চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা। ভোটার তালিকায় নামের অমিল নিয়ে আতঙ্কে পড়ে বিষপান করলেন খাইরুল সেখ নামে এক ব্যক্তি। বর্তমানে তিনি কোচবিহার এম. জে. এন. মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, এবং চিকিৎসক সূত্রে জানা গিয়েছে—তার অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।
বুড়িরহাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের জিতপুর গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল সেখ (৪৫) দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। সম্প্রতি ভোটার তালিকার সংশোধন বা SIR (Special Summary Revision) প্রক্রিয়ার নোটিশ হাতে পেয়েছিলেন তিনি। নথি যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পান, তার নাম সরকারি তালিকায় লেখা হয়েছে ‘খইরুল শেখ’। এই নামের ভুল দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, খাইরুল মনে করছিলেন এই ভুল নামের কারণে তাকে বিদেশি নাগরিক হিসেবে সন্দেহ করা হতে পারে। দিন কয়েক ধরে তিনি মানসিকভাবে ভীষণ অস্থির হয়ে পড়েন। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে বাড়িতেই বিষপান করেন। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
খাইরুলের ভাই বলেন, “ও বারবার বলছিল, নামটা ভুল হয়ে গেছে, এখন যদি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়! আমরা বলছিলাম, এটা শুধু তালিকা সংশোধনের ব্যাপার, কিন্তু ও বিশ্বাস করছিল না।”
প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলিম জানান, “গ্রামে SIR নিয়ে অনেক ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ ভাবছে এটা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের মতো কিছু।”
ঘটনার খবর পেয়ে কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক হাসপাতালে পৌঁছান। তিনি বলেন, “এই আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। SIR প্রক্রিয়া কেবল ভোটার তালিকার সংশোধন, এর সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনও যোগ নেই।”
প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন গ্রামে সচেতনতা প্রচার চালানো হবে, যাতে SIR প্রক্রিয়া নিয়ে ভুল ধারণা দূর হয়। কর্মকর্তাদের কথায়, “SIR মানে Special Summary Revision — এটি সাধারণ ভোটার তালিকা সংশোধন। কেউ আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা জিতপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের নাম ও নথি যাচাই করতে শুরু করেছেন। অনেকে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প বসিয়ে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হোক এই প্রক্রিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য।
স্থানীয় শিক্ষক তপন মণ্ডল বলেন, “শিক্ষার অভাব ও ভুল তথ্যের প্রভাবে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে। সরকারের উচিত সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের কাছে প্রকৃত তথ্য পৌঁছে দেওয়া।” খাইরুলের পরিবারের দাবি, যদি প্রশাসন আগে থেকে পরিষ্কার করে বলত SIR কী, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না।


