মিলন পণ্ডা, এগরা: হলমার্ক সোনার নতুন গয়না বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে কোটি টাকার প্রতারণা! অভিযোগের তির হুগলির (Hooghly) চণ্ডীতলার বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী শেখ সাত্তারের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় দোকান চালানোর পর হঠাৎ দোকানে তালা ঝুলিয়ে গা-ঢাকা দেয় ওই ব্যবসায়ী। একাধিক অভিযোগ জমা পড়তেই তদন্তে নামে পুলিশ, এবং অবশেষে হুগলি থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। মঙ্গলবার কাঁথি মহকুমা আদালত সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে মির্জাপুর বাজারে ‘মুসকান জুয়েলার্স’ নামে একটি সোনার দোকান খোলেন শেখ সাত্তার। দোকানের পাশেই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। প্রথম দিকে স্বাভাবিক ব্যবসা চললেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করেন তিনি। পুরনো সোনার বদলে নতুন গয়না দেওয়া, হলমার্ক সোনার নিশ্চয়তা, অগ্রিম টাকা নিয়ে বিশেষ ডিজাইনের গয়না তৈরির প্রতিশ্রুতি—এসব দেখিয়ে ক্রমশ জমে ওঠে তাঁর ব্যবসা।
কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে আচমকা দোকানে তালা দেখে চমকে ওঠে গোটা এলাকা। দোকান বন্ধ থাকায় সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। ফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না সাত্তারের সঙ্গে। ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসে প্রতারণার অভিযোগ। কেউ দিয়েছেন পুরনো সোনার হার, কেউ বালা বা আংটি আবার কেউ অগ্রিম এক থেকে দুই লক্ষ টাকা দিয়েছেন গয়না তৈরির জন্য। দিন যত গড়োয় অভিযোগের পাহাড় ততই বাড়তে থাকে। দোকানের সামনে প্রতিদিন ভিড় জমাতে থাকেন প্রতারিত গ্রাহকদের দল।
১১ নভেম্বর এগরার আমদই এলাকার বাসিন্দা আপ্তার খান থানায় প্রথম লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর আরও বহু মহিলা ও গ্রাহক অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে এগরা থানার আইসি অরুণ কুমার খান এবং এসআই সাহাবাদ্দিন আলি খান-এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল তদন্ত শুরু করে। সূত্র ধরে হুগলির ভগবতীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় শেখ সাত্তারকে।
পুলিশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে প্রতারণার পরিমাণ তিন কোটি টাকারও বেশি। কয়েক শতাধিক গ্রাহক এই চক্রের শিকার হয়েছেন বলে অনুমান। সোনা কোথায় বিক্রি করা হয়েছে বা লুকিয়ে রাখা হয়েছে, সেই খোঁজ চলছে। সাত্তারের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিনা, তাও তদন্তে দেখা হচ্ছে।
এগরা থানার আইসি অরুণ কুমার খান বলেন, “একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়েছিল। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি একা কাজ করেছেন নাকি বড় কোনও চক্র আছে সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
প্রতারিত এক মহিলা বলেন, “পুরনো সোনা নিয়ে নতুন হলমার্ক গয়না দেবেন বলে টাকা ও সোনা নেন। পরে দোকানে তালা দিয়ে পালিয়ে যান। অভিযোগ করার পর গ্রেফতার হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।”
স্বর্ণ ব্যবসায়ীর গ্রেফতারের খবর ছড়াতেই এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য। প্রতারিত গ্রাহকেরা দাবি তুলেছেন, তাঁদের সোনা ও টাকা যেন দ্রুত উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, সাত্তারের হেফাজতী জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে আশা।


