‘মন্থা’র প্রভাবে উত্তরবঙ্গে লাল সতর্কতা, পাহাড়ে ভূমিধসের আশঙ্কা

Cyclone Montha Bay of Bengal severe storm IMD alert

দার্জিলিং: ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’র প্রভাব এখনও কাটেনি। বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে এসে এই ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত না হানলেও, এর অপ্রত্যক্ষ প্রভাব এখন স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে রাজ্যের উত্তরাংশে (North Bengal)। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সক্রিয় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা যার ফলে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টিপাত।

Advertisements

আবহাওয়া দপ্তরের তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই চার জেলায় হতে পারে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি। ফলে এই জেলাগুলিতে লাল সতর্কতা (Red Alert) জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি কোচবিহার ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় রয়েছে কমলা সতর্কতা।

   

প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে উত্তরবঙ্গের একাধিক নদীর জলস্তর বাড়ছে। তিস্তা, তোর্সা, জালঢাকা, ধূলা ও করলা নদীতে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছচ্ছে জল। প্রশাসন আশঙ্কা করছে, অবিরাম বৃষ্টির জেরে নিম্নভূমি এলাকায় জল ঢুকে পড়তে পারে। ইতিমধ্যেই দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন নদী সংলগ্ন গ্রামগুলিতে সতর্কতা জারি করেছে এবং প্রয়োজনে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা থাকায় পর্যটক ও স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে ঘুম, টংলু, লাভা ও লোলেগাঁও অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসতে পারে মাটি ও পাথর। ইতিমধ্যে উদ্ধার ও বিপর্যয় মোকাবিলা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এছাড়া সিকিমেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সিকিমের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে এবং দার্জিলিংয়ের সান্দাকফু ও ফালুট এলাকায় তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এই কারণে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় তাপমাত্রা দ্রুত নামতে শুরু করেছে।

Advertisements

দক্ষিণবঙ্গেও কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষত মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় অন্তত এক থেকে দুই দিনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। কৃষকদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, খোলা মাঠে ফসল না রেখে দ্রুত নিরাপদে তোলার ব্যবস্থা করতে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় মন্থা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর ফলে বাতাসে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প জমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতেও তার প্রভাব পড়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াংয়ে পর্যটকদের অনেকেই হোটেলবন্দি। সান্দাকফু ট্রেক রুট আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে পাহাড়ি সড়কগুলিতে যানবাহন চলাচলে বাধা তৈরি হতে পারে, তাই অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, ঘূর্ণিঝড় মন্থা সরাসরি আঘাত না করলেও, তার পার্শ্বপ্রভাবে উত্তরবঙ্গ এখন জলমগ্ন। পাহাড় থেকে নদী সর্বত্রই বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা। প্রশাসন, পর্যটক ও সাধারণ মানুষ সবাইকে আপাতত সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।