তীব্র তাপপ্রবাহে শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ দুই ছাত্র, প্রাতঃকালীন বিদ্যালয়ের দাবি

অয়ন দে, কোচবিহার: উত্তরবঙ্গে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের (Heatwave) কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গরমের দাপটে শ্রেণিকক্ষে একের পর এক ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে…

Heatwave Hits Cooch Behar

অয়ন দে, কোচবিহার: উত্তরবঙ্গে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের (Heatwave) কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গরমের দাপটে শ্রেণিকক্ষে একের পর এক ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। দিনহাটা ৩ নম্বর চক্রের দুটি পৃথক বিদ্যালয়ে দুই ছাত্রের অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও অভিভাবক মহল থেকে জোরালোভাবে প্রাতঃকালীন বিদ্যালয় চালু করার দাবি উঠেছে, যাতে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রেখে পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়।

প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে মোক্তারেরবাড়ি জুনিয়র বেসিক স্কুলে। সোমবার সকালে শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা চলাকালীন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র অর্জুন বর্মন হঠাৎ দুর্বল বোধ করে এবং পাশে বসা সহপাঠীর ঘাড়ে মাথা এলিয়ে পড়ে। ঘটনাটি লক্ষ্য করে শিক্ষক শুভেন্দু চক্রবর্তী তৎক্ষণাৎ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। অর্জুনকে বেঞ্চে শুইয়ে তার চোখে-মুখে এবং মাথায় জল দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তীব্র গরমের কারণে অর্জুনের শরীরে পানিশূন্যতা এবং দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল।

   

একই দিনে আরেকটি ঘটনা ঘটে কিসমত দশগ্রাম এস সি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনার সময় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শুভ্র সেন হঠাৎ মাথা ঘুরে অসুস্থ বোধ করে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকান্ত চক্রবর্তী দ্রুত তার চোখে-মুখে জল দিয়ে এবং মাথায় জল ঢেলে প্রাথমিক সেবাযত্ন করেন। পরে শুভ্রর অভিভাবকরা এসে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসকের মতে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শুভ্রর শরীরে তাপজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

এই দুটি ঘটনা শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাঁরা মনে করছেন, বর্তমান তীব্র গরমে শিশুদের স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অভিভাবকরা একযোগে দাবি জানিয়েছেন, বিদ্যালয় সম্পূর্ণ বন্ধ না করে প্রাতঃকালীন শিফটে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। শিক্ষক শুভেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “তীব্র গরমে দুপুরের সময় শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা করা শিশুদের জন্য কঠিন। আমরা চাই, সকালবেলা ক্লাস নেওয়া হোক, যাতে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে এবং পড়াশোনার ধারাবাহিকতাও বজায় থাকে।”

Advertisements

প্রধান শিক্ষক সুকান্ত চক্রবর্তীও একই মত পোষণ করে বলেন, “সকালে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। প্রাতঃকালীন ক্লাস চালু করলে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।” অভিভাবকদের মধ্যেও এই দাবি জোরালো হয়েছে। অর্জুনের মা রীতা বর্মন বলেন, “আমাদের বাচ্চারা এই গরমে কষ্ট পাচ্ছে। স্কুল বন্ধ না করে সকালে ক্লাস হলে আমরা অনেকটা নিশ্চিন্ত হব।” শুভ্রর বাবা অমিত সেনও বলেন, “এই তীব্র গরমে দুপুরে ক্লাস করা শিশুদের জন্য বিপজ্জনক। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।”

এই ঘটনাগুলি দিনহাটার অন্যান্য বিদ্যালয়েও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় শিক্ষক সংগঠনের এক সদস্য জানান, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শুধু ছাত্রছাত্রীই নয়, শিক্ষকরাও শ্রেণিকক্ষে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি বলেন, “প্রাতঃকালীন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষকদের পক্ষেও পড়ানো সহজ হবে।”

যদিও এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাতঃকালীন বিদ্যালয় চালু করার বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি, তবে শিক্ষক ও অভিভাবকরা দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের এই বিষয়ে তৎপর হওয়া উচিত। এই ঘটনার পর দিনহাটা এলাকায় তীব্র তাপপ্রবাহের প্রভাব এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এর প্রভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, প্রশাসন শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।