Marina Kujur: বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলার বোন

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে নাগরাকাটা এলাকায়। বিজেপি থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলার বোন মেরিনা কুজুর…

Breaking news update on Kolkata24x7 website featuring the latest updates and events in Bengal.

short-samachar

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে নাগরাকাটা এলাকায়। বিজেপি থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলার বোন মেরিনা কুজুর (Marina Kujur), যিনি আগে বিজেপির একজন পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। রবিবার নাগরাকাটায় বিজয়া সম্মিলনী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেরিনার হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সভাপতি মহুয়া গোপ এবং দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

   

মেরিনা কুজুরের দলবদল
মেরিনা কুজুরের তৃণমূলে যোগদানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, জন বারলার প্রভাবেই মেরিনা তৃণমূলে নাম লেখান, যদিও মেরিনা নিজে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর নিজস্ব এবং তাঁর দাদার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। মেরিনা বলেন, “বিজেপিতে আমি কোনও সহযোগিতা পাইনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি এবং সেজন্যই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি
মেরিনা কুজুরের রাজনৈতিক যাত্রার শুরু বিজেপি থেকে। তিনি ২০১৮ সালে সুলকাপাড়া এলাকা থেকে বিজেপির টিকিটে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং সহযোগিতার অভাবে তাঁর বিজেপির প্রতি আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি তাঁকে টিকিট দেয়নি, যা মেরিনার ক্ষোভের অন্যতম কারণ। ফলে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই পদক্ষেপ জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

জন বারলার প্রতিক্রিয়া ও দলের অবস্থান
মেরিনার এই দলবদলের পর জন বারলার ভূমিকা নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে যে, মেরিনার এই পদক্ষেপে বারলার অজান্তেই হয়েছে। জন বারলা বিজেপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, এবং তাঁর পরিবারের একজন সদস্যের তৃণমূলে যোগদান দলীয় অভ্যন্তরে চাপ তৈরি করতে পারে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

তৃণমূলের অভ্যর্থনা
মেরিনার তৃণমূলে যোগদানে শাসক দলের নেতারা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মেরিনা কুজুরের যোগদান আমাদের দলের শক্তিকে আরও বাড়াবে। তিনি একজন দক্ষ নেতা এবং আমরা আশাবাদী যে তিনি আমাদের দলের মূল আদর্শকে ধারণ করে কাজ করবেন।” মহুয়া গোপ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমুখী রাজনীতি এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ দেখেই মেরিনা কুজুরের মতো নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।”

সিপিআইএম সদস্যদের যোগদান
মেরিনার পাশাপাশি এদিন সিপিআইএমের একাধিক সদস্যও তৃণমূলে যোগ দেন। চম্পাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য অরবিন্দ গুড়িয়া সহ আরও অনেকেই শাসক দলে নাম লেখান। তাঁরা জানিয়েছেন, তৃণমূলের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মানুষের স্বার্থে কাজ করার জন্যই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিজেপির পরিস্থিতি
মেরিনা কুজুরের তৃণমূলে যোগদান বিজেপির জন্য এক বড় আঘাত হিসেবে দেখা যাচ্ছে। জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক অঙ্গনে বিজেপি ইতিমধ্যেই কিছুটা দুর্বল অবস্থানে রয়েছে এবং মেরিনার মতো নেতার দলত্যাগ দলের ভিতরে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। বিজেপির স্থানীয় নেতারা অবশ্য বলছেন যে, এটি মেরিনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং দলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
জলপাইগুড়ি জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাব বাড়ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমুখী কার্যক্রম এবং গ্রামীণ এলাকার মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাবের কারণে অনেকেই তৃণমূলের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। অন্যদিকে, বিজেপির ভিতরে বিভাজন এবং সমন্বয়ের অভাব দলের শক্তিকে দুর্বল করে তুলছে। মেরিনা কুজুরের মতো নেতার তৃণমূলে যোগদান এই রাজনৈতিক বাস্তবতারই প্রতিফলন।

ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি
মেরিনা কুজুরের যোগদান জলপাইগুড়ির রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জেলার অন্যান্য এলাকা থেকেও আরও নেতাদের দলে টানতে চাইবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলটি উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে, বিজেপির জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা হতে পারে যে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং সমন্বয়হীনতা দলকে আরও দুর্বল করতে পারে।
শেষ পর্যন্ত, মেরিনা কুজুরের এই দলবদল শুধু একজন নেতার সিদ্ধান্ত নয়, বরং জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক চিত্র পরিবর্তনের ইঙ্গিতও বহন করে।