ডুয়ার্স: প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা জলে ভেসে গিয়েছে জনজীবন থেকে শুরু করে পর্যটন অবকাঠামো পর্যন্ত। বিশেষ করে ডুয়ার্স অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের (Jaldapara National Park) পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ফলে এখনই সেখানে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিল বনদপ্তর।
রবিবার রাতের একটানা বৃষ্টিতে আলিপুরদুয়ার এবং সংলগ্ন ডুয়ার্স এলাকায় জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। নদীর জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে একাধিক সেতু, রাস্তা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো। জলমগ্ন বহু এলাকা। এর ফলেই বিপদের মুখে পড়েছে উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলগুলিও। জলদাপাড়ার মতো সংরক্ষিত অরণ্যের পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে আরও জটিল।
বন্যার জেরে রবিবার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে ভেসে গিয়েছিল একটি একশৃঙ্গ গণ্ডার। বহু দূর থেকে সেটিকে উদ্ধার করা হলেও সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই উদ্বেগ বেড়েছে বন্যপ্রাণপ্রেমীদের মধ্যে। উদ্ধার হয়েছে একটি হরিণের মৃতদেহও। পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আশঙ্কায় বনদপ্তর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় পর্যটকদের জন্য উদ্যান বন্ধ রাখার।
কবে আবার খুলবে এই বনভূমি? এই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বেশি ঘুরছে পর্যটন মহলে। মঙ্গলবার এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর জলদাপাড়ার ডিএফও প্রবীণ কাসওয়ান জানিয়েছেন, “আমরা বর্তমান পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করেছি এবং পুনর্গঠনের রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে এখনই পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার মতো অবস্থা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “জলদাপাড়ার বিস্তীর্ণ অংশে জল সরে গেলেও এখনও কোর এলাকায় প্রবেশ সম্ভব হয়নি। কারণ, জঙ্গলের ভিতরে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত কাঠের সেতুগুলি ভেঙে পড়েছে। হলং সেতু-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাঠের ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ফলে বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সঠিক তথ্যও এখনও হাতে নেই।”
আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক এবং রাজ্য বন ও পর্যটন কমিটির সদস্য সুমন কাঞ্জিলাল জানিয়েছেন, “প্রকৃতির রোষে বড়সড় ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন ও বনদপ্তর একযোগে কাজ করছে। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই সমাধান মিলবে।”
ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে যাতে আলিপুরদুয়ার জেলায় আটকে পড়া পর্যটকরা সাহায্য পেতে পারেন। প্রশাসন ও বনদপ্তর একসঙ্গে কাজ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে কবে থেকে আবার জঙ্গল সাফারি বা পর্যটন শুরু হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত সময়সীমা জানায়নি কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পূরণ, কাঠের সেতু পুনর্নির্মাণ এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে পুজোর ছুটিতে জলদাপাড়ায় সাফারি পরিকল্পনা করে রেখেছেন যাঁরা, তাঁদের হয়তো অপেক্ষা আরও বাড়বে।
তবু আশাবাদী স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশা, নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠলে শীতকালীন মরশুমে জলদাপাড়া ফের পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া যেতে পারে।