শিলিগুড়ি, ১৩ অক্টোবর: অবশেষে শিলিগুড়িতে চালু হলো টোটো রেজিস্ট্রেশন (ToTo Registration) প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর, সোমবার থেকে শুরু হলো এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি, যার মাধ্যমে টোটো চালকদের জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরিবহণ দপ্তরের কোর্টমোড় সংলগ্ন অফিসে এদিন এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা (দার্জিলিং) বিশ্বজিৎ দাসও।
এই প্রথম, শিলিগুড়িতে টোটো চালকদের জন্য রেজিস্ট্রেশন শুরু হলো। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার প্রথম জন ছিলেন এক মহিলা, যিনি শিলিগুড়ির স্থানীয় বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে টোটো চালক হিসেবে কাজ করে আসছেন। তার হাতে প্রথম রেজিস্ট্রেশন শংসাপত্র তুলে দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, যা টোটো চালকদের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
শিলিগুড়ির মতো বড় শহরে যেখানে যানবাহনের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে, সেখানে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট কমানোর জন্য এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়ম ও সিস্টেমের মধ্যে টোটো চলাচল নিশ্চিত করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। টোটো চালকদের একটি নথিভুক্ত তালিকা তৈরি করা, সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, অবৈধ টোটো চলাচল বন্ধ করা এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানো—এ সবই এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভব হবে।
শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “টোটো রেজিস্ট্রেশন চালু হওয়ার মাধ্যমে শহরে পরিবহণ ব্যবস্থা আরও সুসংগঠিত হবে। আমাদের লক্ষ্য, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা।” তিনি আরও জানান, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে শহরের সড়কগুলিতে চলাচলকারী টোটোদের সংখ্যা সঠিকভাবে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে এবং যে সমস্ত টোটো অবৈধভাবে চলাচল করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এছাড়া, গৌতম দেব উল্লেখ করেন যে, শিলিগুড়ির পরিবহণ ব্যবস্থা এমনভাবে গঠন করা হবে যাতে সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং সুসংগঠিত পরিবহণ সেবা প্রদান করা যায়। তিনি বলেন, “এই উদ্যোগের ফলে শহরের পরিবহণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হবে, এবং এটি পরিবহণ দপ্তরের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।”
প্রথম রেজিস্ট্রেশন পাওয়া মহিলা চালক, যিনি নিজে একটি টোটো চালান, তার নাম রীনা খাতুন। তিনি বলেন, “এতদিন আমরা অবৈধভাবে টোটো চালিয়ে আসছিলাম, কিন্তু এখন থেকে আমরা নিরাপদে এবং নিয়ম মেনে চলতে পারব। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় আমরা বেশ আনন্দিত।” রীনা খাতুন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে টোটো চালক হিসেবে কাজ করে আসছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি তার পরিবারের দায়িত্ব পালন করছেন। শিলিগুড়িতে মহিলাদের টোটো চালক হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি মহিলাদের জন্য নতুন এক সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং তাদের কর্মসংস্থানে আরও উন্নতি ঘটবে।
এছাড়া, পরিবহণ দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কেবলমাত্র টোটো চালকদের জন্যই নয়, বরং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবহণ সিস্টেমের প্রতিটি অংশকে আরও সুরক্ষিত ও সুসংগঠিত করা হবে। টোটো চালকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স প্রদান, এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এখন থেকে শিলিগুড়ির সড়কগুলিতে প্রতিটি টোটো একটি পরিচিত নম্বর প্লেটের সঙ্গে চলাচল করবে, যা চালকের পরিচয়, টোটোর মালিকানার তথ্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডেটা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, শিলিগুড়ির পরিবহণ দপ্তর বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ টোটো বন্ধ করার উদ্যোগ নেবে।