দিনহাটার বাসিন্দাকে অসমের NRC-র নোটিশ, ‘অনুপ্রবেশকারী’ তকমার মুখে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক

অয়ন দে, কোচবিহার: বিতর্ক ফের মাথা চাড়া দিল জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) নিয়ে। অসম সরকারের পক্ষ থেকে এনআরসি সংক্রান্ত একটি ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমার নোটিশ পাঠানো…

দিনহাটার বাসিন্দাকে অসমের NRC-র নোটিশ, ‘অনুপ্রবেশকারী’ তকমার মুখে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক

অয়ন দে, কোচবিহার: বিতর্ক ফের মাথা চাড়া দিল জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) নিয়ে। অসম সরকারের পক্ষ থেকে এনআরসি সংক্রান্ত একটি ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমার নোটিশ পাঠানো হয়েছে কোচবিহারের দিনহাটার এক স্থায়ী বাসিন্দা উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে। অভিযোগ, তিনি নাকি ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে অসম সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। অথচ তিনি বলেন, তিনি জন্ম থেকে দিনহাটার চৌধুরীহাটেই বসবাস করছেন এবং কোনও দিনও কোচবিহারের বাইরে যাননি।

নোটিশে বলা হয়েছে, উত্তম কুমার ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে উপযুক্ত নথি না জমা দিলে তাকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এই নোটিশে (NRC) আরও বলা হয়েছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনে উত্তম বৈধ পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তাঁকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরেই চিঠি পাঠানো হয়েছে।

   

উত্তম কুমার ব্রজবাসী জানান, “গত জানুয়ারি মাসে আমার বাড়িতে পুলিশ একটি চিঠি দিয়ে যায়। চিঠিতে লেখা ছিল এটা NRC সংক্রান্ত বিষয়। পরে প্রতিবেশীদের দেখিয়ে জানতে পারি, অসম সরকার আমাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।”

তাঁর অভিযোগ, জীবনে কখনও অসম তো দূরের কথা, কোচবিহার জেলার বাইরেও যাননি। জন্ম থেকে পরিবার সহ দিনহাটার সাদিয়ালের কুঠি গ্রামে থাকেন তিনি।

উত্তমের আইনজীবী অপূর্ব সিনহা জানান, “অসম সরকার ২০১৫ সালে এই NRC মামলা শুরু করলেও সেই চিঠি ৯ বছর পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে আসে। তারপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আমার মক্কেল চিঠিটি পান।”

তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেখানে NRC স্বীকৃতি দেয় না, সেখানে কীভাবে অসম সরকারের এই চিঠি জেলা পুলিশ সুপার গ্রহণ করেন? এটা সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নসাপেক্ষ।”

Advertisements

অপূর্ববাবু জানান, তাদের তরফে বেশ কিছু বৈধ পরিচয়পত্র (যেমন ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড) জমা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অসম সরকার তা অধিকাংশই নাকচ করেছে। এখন তারা দাবি করছে, ১৯৬৬ সাল থেকে উত্তমের নাম ধারাবাহিক ভোটার তালিকায় থাকতে হবে। কিন্তু এই সময়ের ভোটার তালিকা জেলা বা রাজ্য প্রশাসনের কাছেই নেই।

এই অবস্থায় আইনজীবী আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “১৫ জুলাইয়ের মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় নথি রাজ্য সরকার না দেয়, তাহলে উত্তমকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, যা অত্যন্ত অন্যায়।”

এই ঘটনা ফের প্রশ্ন তোলে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা ও পরিচয়ের ওপর। যদি রাজ্যের প্রশাসনই প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এক নিরপরাধ নাগরিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।

এনআরসি সংক্রান্ত এই ধরনের ‘ক্রস-স্টেট’ জটিলতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে কিনা, তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের বিষয়গুলিতে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে আরও সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। নাহলে এক সাধারণ নাগরিক ভুলবশত অন্য রাজ্যের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হয়ে উঠবেন — এটাই হবে দুর্ভাগ্যজনক।