‘মন্থা’ কাটলেও দুর্যোগ এখনও কাটছে না বঙ্গে

cyclone-mantha-bengal-weather-alert

কলকাতা: শরতের শেষ প্রান্তে পা রেখে বাংলার আকাশে মেঘের ঘনঘটা ঘনিয়ে উঠেছে, আর তার সঙ্গে এসেছে ঘূর্ণিঝড় মান্থার ভয়াবহ ছায়া। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি) এর সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, ৩১ অক্টোবর শুক্রবার থেকে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা জনজীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

Advertisements

বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের পার্বত্য এলাকায় ধসের আশঙ্কা বাড়িয়েছে এই সতর্কতা, যখন দক্ষিণবঙ্গে কলকাতা সহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝোড়ো হাওয়া এবং বজ্রপাতের ভয়। আইএমডি-র আলিপুর অফিস থেকে জারি হওয়া হলুদ, কমলা এবং লাল সতর্কতা রাজ্যের ২৩টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করে তুলেছে।

   

বঙ্গের দুর্নীতিতে দায়ী SIR! ক্ষমা চাইতে বললেন তরুণজ্যোতি

ঘূর্ণিঝড় মান্থা, যা বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বাংশে গভীর চাপের কেন্দ্র থেকে উদ্ভূত হয়ে আন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে, তার প্রভাব এখনও কমেনি। আইএমডি-র বুলেটিন অনুসারে, এর অবশিষ্ট শক্তি বাংলার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে বৃষ্টির ঢেউ তুলছে। উত্তরবঙ্গে পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। ৩১ অক্টোবর দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টি, অর্থাৎ ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। লাল সতর্কতা জারি হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ধসপ্রবণ এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে। পাহাড়ি রাস্তায় যানজট এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে, বিশেষ করে চা বাগান এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। আইএমডি সতর্ক করেছে, বজ্রবিদ্যুৎসহ হাওয়ার গতি ৩০-৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা হতে পারে, যা গাছপালা উড়িয়ে নেওয়ার মতো।

Advertisements

দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়া কিছুটা উন্নত হলেও সতর্কতা কম নয়। কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বীরভূমে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) কলকাতায় ইতিমধ্যে ভালো বৃষ্টি হয়েছে, যা রাস্তায় জল জমে যানজট সৃষ্টি করেছে। শুক্রবারও এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে, সঙ্গে বজ্রপাত এবং ঝোড়ো হাওয়া।

আইএমডি-র মতে, রবিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলতে পারে। তাপমাত্রার কথা বললে, উত্তরবঙ্গে সর্বোচ্চ ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১৮-২০ ডিগ্রি থাকবে, যখন দক্ষিণবঙ্গে কলকাতায় ২৮-৩০ ডিগ্রি সর্বোচ্চ এবং ২২-২৪ ডিগ্রি সর্বনিম্ন। আর্দ্রতা ৮০-৯০ শতাংশের কাছাকাছি থাকায় আবহাওয়া আবহাওয়া শীতল কিন্তু অস্বস্তিকর হবে।

এই আবহাওয়ার প্রভাব কৃষি ও মৎস্যখাতকেই সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে। উত্তরবঙ্গের ধানক্ষেত এবং চা বাগানে অতিরিক্ত বৃষ্টি ফসলের ক্ষতি করতে পারে, যখন দক্ষিণবঙ্গের উপকূলে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি। আইএমডি মৎস্যজীবীদের বঙ্গোপসাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ ঢেউয়ের উচ্চতা ৩-৪ মিটার হতে পারে।

স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যে রিলিফ ক্যাম্প এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় অক্টোবরে বিরল, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ছে। আগামী সপ্তাহে (১-৬ নভেম্বর) বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উভয় অঞ্চলে, তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।