অয়ন দে, কোচবিহার: তৃণমূল শিক্ষা সেলের নেতার বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ ধরে আয়কর তল্লাশিতে চাঞ্চল্য ছড়াল কোচবিহারে (Cooch Behar)। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দলীয় নেতা জয়দেব আর্য। সোমবার দুপুরে শুরু হওয়া এই অভিযান চলে টানা ১৯ ঘণ্টা। মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ অভিযান শেষ করে বাড়ি ছাড়েন আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা।
জানা গিয়েছে, জয়দেব আর্য তুফানগঞ্জ টাউন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি তৃণমূল শিক্ষা সেলের সঙ্গে যুক্ত। হঠাৎ করেই তাঁর বাড়িতে হাজির হন কেন্দ্রীয় আয়কর দফতরের একাধিক আধিকারিক। সূত্রের খবর, প্রথমে তাঁরা পৌঁছন জয়দেবের দাদা জগদীশ আর্যের বাড়িতে। সেখান থেকে জয়দেবকে নিয়ে যান মাস্টারপাড়া এলাকায় তাঁর অন্য বাড়িতে। সেই বাড়িতেই চলে দীর্ঘক্ষণ জেরা এবং তল্লাশি।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জয়দেব আর্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমার ফোন এবং ইমেল হ্যাক করে আমার নাম ব্যবহার করে বড়সড় আর্থিক লেনদেন হয়েছে। সেই কারণেই তদন্তে নামতে বাধ্য হয়েছে আয়কর দফতর। হ্যাকারদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলেও জানান তিনি।”
তবে আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা গোটা তল্লাশি অভিযান শেষ করে সাংবাদিকদের কোনও প্রতিক্রিয়া না দিয়েই এলাকা ত্যাগ করেন। এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়, আদৌ জয়দেবের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ আছে কিনা বা কী ধরনের লেনদেন ঘিরে এই তল্লাশি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জয়দেবের মা কয়েকদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন। সেই কারণেই তিনি সম্প্রতি মাস্টারপাড়ার পুরনো বাড়িতে এসেছেন। কিন্তু হঠাৎ এই কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জয়দেবের বাড়ির সামনে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়।
বিভিন্ন মহলের মতে, শিক্ষক নেতা হিসেবে জয়দেব আর্যের রাজনৈতিক সংযোগ এবং প্রশাসনিক প্রভাব যথেষ্ট। তাই এই ঘটনাকে শুধুই আর্থিক তদন্তের চেহারায় দেখা যাচ্ছে না অনেকের কাছে। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, সামনে বড় কোনও তথ্য ফাঁসের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে শিক্ষক জয়দেব আর্য জানিয়েছেন, “আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। প্রযুক্তিগত প্রতারণার শিকার হয়েছি। তদন্তে সবটা স্পষ্ট হবে।” আপাতত তিনি পুলিশের সাইবার শাখার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে কেউ এখনও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে দলীয় অন্দরে আলোচনার জোর যে বেড়েছে, তা বলাই বাহুল্য। তুফানগঞ্জ শহরের মাস্টারপাড়ায় এই ঘটনাকে ঘিরে নিরাপত্তার দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও খবর।
সর্বোপরি, ১৯ ঘণ্টার তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের জেরে এলাকায় কৌতূহলের সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, ‘‘এইভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি যদি সাধারণ এক শিক্ষকের বাড়িতে হানা দেয়, তাহলে নিশ্চয়ই বড় কিছু আছে।’’ এখন দেখার, এই ঘটনার পিছনে সত্যিই কোনও বড় অর্থনৈতিক দুর্নীতি রয়েছে, নাকি এটি নিছকই প্রযুক্তিগত জালিয়াতির ফল।